পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কিশোরীটি তার মা-বাবাকে নাম ধরে সম্বোধন করে জানাল, “আমার কাছে মানত করেও মানত রাখিসনি বলে আমি নিজেই এসেছি।”

 মা-বাবা ভয়ে কেঁপে উঠলেন। মানত করে মানত রাখতে না পারার কথা তো সত্যি! মা-বাবা মেয়ের পায়ের উপর উপুড় হয়ে পড়লেন। মেয়েটি রাতারাতি 'বড়ি-মা' হয়ে গেল। আশে-পাশের গ্রামগুলো থেকে দলে দলে মানুষ ‘বড়ি-মা’ দর্শনের আশায়, কৃপালাভের আশায়, রোগমুক্তির আশায় হাজির হতে লাগল। কিশোরীটির ব্যবহারে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন এসে গেছে। কেউ জুতো পায়ে, লাল পোশাক পরে অথবা চশমা চোখে ঘরে ঢুকতে গেলেই র্ভৎসনা করছে। বড়দের নানা ধরনের আদেশ করছে। ভক্তরা ফল, ফুল, মেঠাইয়ে ঘর ভরিয়ে তুলতে লাগলেন।

 ‘বড়ি-মা' আবির্ভাবের দিন দুয়েকের মধ্যে এক বয়স্ক বিবাহিতা ‘বড়ি-মা'র সেবিকা ঘন ঘন মূর্চ্ছা যেতে লাগলেন। তারপর এক সময় ‘বড়ি-মা’র মত মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ঘোষণা করলেন তিনি 'ছোট-মা'। একই ঘরে দু'মায়ের পূজো হতে লাগল |

 ৩০ মে এই গ্রামেরই এক অষ্টাদশী তরুণী ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাওয়ার পর ঘোষণা করল সে মা-কালী। এখানেও ভক্তের অভাব হলো না।

 ৩১ মে এই গ্রামেরই একটি বিবাহিতা তরুণীকে ভর করলেন 'মাঝলী-মা'। সে রাতেই আর এক মহিলার উপর ভর করলেন ‘সাঁঝলী-মা'।

 জনমানসে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনাগুলোর দিকে রাঁচী মানসিক আরোগ্যশালার চিকিৎসকদের দৃষ্টি আকর্ষিত হলো। চিকিৎসকরা ভরগ্রস্তদের পরীক্ষা করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যেই সাত দিনের মধ্যে ওদের প্রত্যেককে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনলেন। ওই চিকিৎসকরা মত প্রকাশ করলেন-ওই গ্রামের ভরে পাওয়া রোগীরা প্রত্যেকেই পরিবেশগতভাবে বিশ্বাস করত, ঈশ্বর সময় সময় মানুষের শরীরে ভর করেন। প্রথম কিশোরীটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হিস্টিরিয়া নামক মানসিক রোগের শিকার হয়ে পড়ে। কিশোরীটি নিজের সত্তা ভুলে গিয়ে 'বড়ি-মা'র সত্তা নিজের মধ্যে প্রকাশিত ভেবে অদ্ভুত সব আচরণ করতে থাকে। স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত, ধর্মান্ধ, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, যুক্তি-বুদ্ধি কম, আবেগপ্রবণ। ফলে ওদের মস্তিস্ককোষের সহনশীলতাও কম। তাই একজনের হিস্টিরিয়া দ্রুত বহু জনের মধ্যে সঞ্চালিত হয়েছে।

 'হিস্টিরিয়া' মনোবিজ্ঞানের চোখে কী, একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক। সাধারণভাবে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, অল্প-শিক্ষিত, শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত, বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা ও যুক্তির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ না পাওয়া বঞ্চিত শোষিত মানুষদের মধ্যেই হিস্টিরিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সাধারণভাবে

৭৯