পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বা বৈশিষ্ট্য সামান্যতম কাজ করেনি, কারণ কাজ করা সম্ভব নয়। কাজ করেছে স্যাণ্ডেলের প্রতি রোগীদের অন্ধ-বিশ্বাস।

 সুকান্ত মুস্তাফি আমার বন্ধু, রক্তচাপের রোগী। বছর কয়েক আগের কথা। ওর সল্টলেকের বাড়িতে গিয়েছি। ওর পরনে ছিল পাজামা ও স্যাণ্ডো গেঞ্জি। ডান বাহুতে দেখতে পেলাম ঘড়ির বেল্টের মত একটা বেল্ট। ওটা কি জিজ্ঞেস করায় জানাল, ম্যাগনেটিক বেল্ট। এক বন্ধু বিদেশ থেকে এনে দিয়েছেন। বলেছেন, রক্তচাপ ঠিক রাখতে নাকি অব্যর্থ। সুকান্তও নাকি বেশ ভালই কাজ পাচ্ছে।

 বুঝলাম বেল্টের প্রতি বিশ্বাস সুকান্তর রক্তচাপকে ঠিক রাখতে সাহায্য করছে। এও প্ল্যাসিবো চিকিৎসারই ফল।

 আবার একই ধরনের বেল্ট পরেও আমার বন্ধু পত্নী অধ্যাপিকা সুচরিতা সান্যাল তাঁর রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পারেননি।


 এ-বারের ঘটনার নায়ক ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং। নায়িকা তাঁর প্রেমিকা এলিজাবেথ। এলিজাবেথ ছিলেন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। এলিজাবেথের পরিবারের সকলের না-পছন্দ মানুষ ছিলেন রবার্ট ব্রাউনিং। রবার্ট ব্রাউনিং পরিকল্পনা করেছিলেন এলিজাবেথ নিজের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলে দু'জনে বিয়ে করবেন। এলিজাবেথের বাড়ি ছেড়ে বেরোন ছিল একটা সমস্যা। কারণ শিরদাঁড়ার প্রচণ্ড ব্যথায় তিনি ছিলেন শয্যাশায়ী। ব্রাউনিং-এর উৎসাহ এলিজাবেথকে রোগ জয় করতে সক্ষম করেছিল। এলিজাবেথ শিরদাঁড়ার ব্যথা ভুলে বাড়ির উঁচু পাঁচিল টপকে বাইরে এসেছিলেন এবং শেষপর্যন্ত রবার্ট ব্রাউনিংকে বিয়ে করেছিলেন।


 সালটা সম্ভবত '৮৪। এক বিখ্যাত পুস্তক প্রকাশকের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে গিয়েছি। হোটেলে পৌঁছতেই রাত দশটা পার হয়ে গেল। এগারোটায় খাবারের পাঠ চুকানোর পর প্রকাশক বন্ধুটির খেয়াল হলো সঙ্গে ঘুমের বড়ি নেই। অথচ প্রতি রাতেই ঘুম আনে ঘুমের বড়ি। বেচারা অস্থির ও অসহায় হয়ে পড়লেন। “কি হবে প্রবীর? এত রাতে কোনও ওষুধের দোকান খোলা পাওয়া অসম্ভব। তোমার কাছে কোনও ঘুমের ওষুধ আছে?” বললাম, “আমারও তোমার মতোই ঘুম নিয়ে সমস্যা। অতএব সমাধানের ব্যবস্থা সবসময়ই সঙ্গে রাখি। শোবার আগেই ওষুধ পেয়ে যাবে।”

 শুতে যাওয়ার আগে প্রকাশকের হাতে একটা ওষুধহীন ক্যাপসুল দিয়ে আমিও একটা খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। ক্যাপসুলটা নেড়ে-চেড়ে দেখে প্রকাশক বললেন, “এটা আবার কি ধরনের ওষুধ? ক্যাপসুলে ঘুমের ওষুধ? নাম কি?”

৯০