পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সে সময়কার মানুষদেরও একটা ‘ধর্ম' অবশ্যই ছিল। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের ধর্ম থেকে মানুষের ধর্ম-এর একটা স্পষ্ট পার্থক্যও ছিল। এই পার্থক্যই মানুষকে অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করেছে, বিশিষ্ট করেছে। সে সময় মানুষের ‘ধর্ম ছিল 'মনুষ্যধর্ম', যা বর্তমান মানবতারই প্রাথমিক পর্যায়। অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে আদিম মানুষদের এই 'ধর্ম'-এর পার্থক্য ছিল এই, অন্যান্য প্রাণীরা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিল; কিন্তু মানুষ সেখানে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেবার পাশাপাশি প্রতিকূল প্রকৃতিকে নিজেদের অনুকূলে আনতেও সচেষ্ট ছিল।

 এই আলোচনার সূত্র ধরে আমরা এখন নিশ্চয়ই বলতে পারি, “ঈশ্বর বিশ্বাস পৃথিবীর সব ধর্মেই আবহমান কাল থেকে চলে আসছে"—ইত্যাদি জাতীয় প্রতিটি কথা ঐতিহাসিক ভাবেই অসত্য, কারণ ‘ধর্ম বলতে বর্তমানকালের ধর্মীয়বেত্তারা যা বোঝান, সেই ‘ধর্ম'ই আবহমানকালের নয়।

O

“ঈশ্বর বিশ্বাস পৃথিবীর সব ধর্মেই আবহমান কাল থেকে চলে আসছে” ইত্যাদি জাতীয় প্রতিটি কথা ঐতিহাসিক ভাবেই অসত্য, কারণ ‘ধর্ম' বলতে বর্তমানকালের ধর্মীয়বেত্তারা যা বোঝান, সেই ‘ধর্ম'ই আবহমানকালের নয়।

O


 দুইঃ ঈশ্বর অবিশ্বাসী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ইতিহাসও প্রাচীন। এই ঈশ্বর বাদ দেওয়া ধর্মকেও সমষ্টিগত রূপ দেওয়া হয়েছিল, সংঘের রূপ দেওয়া হয়েছিল। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম এমনই দুই ধর্ম যারা নিরীশ্বরবাদী এবং বেদবিরোধী হিসেবে প্রাচীন ভারতে প্রসিদ্ধ ছিল।

 এই প্রসঙ্গে এটুকু মনে করিয়ে দিলে বোধহয় একটা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, চার্বাক দর্শনের নিরীশ্বরবাদী নাস্তিকতাবাদের সঙ্গে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের নিরীশ্বরবাদী নাস্তিকতাবাদের মৌলিক পার্থক্য ছিল।

 বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম নিরীশ্বরবাদী ও বেদবিরোধী হলেও এই ধর্মের প্রবক্তা চিন্তানায়করা মানুষের পার্থিব জীবনের অনিবার্য পরিণতি দুঃখময় বলে মনে করতেন। পীড়া-জরা-মৃত্যু ইত্যাদি দুঃখময় জীবন থেকে নিজেকে বাঁচাতে জীবন বিচ্ছিন্ন এক জীবনকে খুঁজতে চেয়েছিলেন। তাঁদের এমনই ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে জীবনের উদ্দেশ্যকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা ছিল স্পষ্টতই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।

 চার্বাকবাদ নিরীশ্বরবাদী ও বেদবিরোধী অবশ্যই কিন্তু মানুষের পার্থিব জীবনের প্রতি চার্বাক দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যথেষ্ট ইতিবাচক। তাঁদের চিন্তার মধ্যে ছিল যুক্তি ও বিজ্ঞানমনস্কতার বীজ।

৯৪