পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাত্রির ধমক খেয়ে অসিতবাবু থেমে গেছেন। এতক্ষণ লোকটা যেন হঠাৎ ক্ষেপে উঠেছিল। এখন সেই জুলে ওঠা ভাবটা মিইয়ে গেছে। আস্তে আস্তে ফণা নামানো সাপের মত নিস্তেজভাবে অসিতবাবু ওঘরের দিকে চলে গেলেন । রাত্রি বলে ক্লাস্ত স্বরে { --মাঝে মাঝে পাগলের মত আজে-বাজে বকেন। ‘মেমরি ও ফেল করেছে। আমাকে বলেন-গুলী করে মেরে ফেলবো। কি যে যন্ত্রণায় পড়েছি অমৃত। ক্লাস্ত কণ্ঠে রাত্রি শুনিয়ে চলে—অবশ্য আই এম হেল্পলেস অমৃত । অনেক চেষ্টা করেছি। বেঁচে থাকার জন্য, দোরে দোরে ঘুরেছি। কিন্তু কিছুই হয় নি। একদিন দেখলাম ওই নীতি বিবেক সব মিথ্যা। ওগুলো নিয়ে বঁচা যায় না। এই যুগে। তাই বাধ্য হয়েই সবকিছুকে কানাকড়ির দামে বিকিয়ে দিলাম। আই এ্যাম লষ্ট। রাত্রি নিজেকে সামলে নিয়েই বলে। —দাঁড়িয়ে রইলে যে! বসবে না ? চল— অমৃত কি ভেবে বসল। কালকের বৈকালে—সন্ধ্যায় দেখা সে-ই কৃত্রিম রং বাহারে ঝলমল মাদকতা আনা সেই মেয়েটি এ নয়। রাত্রির চোখে-মুখে অসহায় ক্লাস্তির আতাস ৷ অমৃত কালকের বৈকালের কথাটা বলে না। শুধোলো সাধারণ সহজ স্বরে। --চাকরী-বাকরী কি করছে ? রাত্রি, ওর দিকে চাইল। ওর কালো চোখের অতল চাহনিতে ফুটে ওঠে নীরব আর্তি। সেটাকে চাপাবার চেষ্টা করে সে জানায় { -একটা কাজ। আপাতত করছি। জানি না কতোদিন করতে হবে। এক এক সময় মনে হয় অমৃত আমরা সবাই পাগল হয়ে যাবো। ড্যাডির মত বর্তমানকে ভুলে অতীতের মধ্যেই কিসের সন্ধান করবো। কারণ বর্তমান আমাদের কাছে দুঃসহ বেদনার, আর ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে যন্ত্রণাময়-আতঙ্কের মুহুর্ত। বাবাকে দেখলে ? উনি সেই সাম্রাজ্যের যুগেই বাস করছেন, আমাদের সেই অতীতের গৌরবও নেই। তাই অন্ধকারেই ডুবে যাবো। তাই হয়তো যেতে বসেছি অমৃত। অমৃত কথা বললো না। রাত্রির দিকে চেয়ে থাকে। Σ. Σ' ό