পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এতদিন তবু কলেজ করতে হতাে, পড়াশোনার ভাবনাও ছিল। একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল ভালোবাবে পাশ করতে হবে তাকে, আর পরীক্ষার বেড়াটা নির্বিঘ্নে সসম্মানে টপকাতে পারলে একটা চাকরী জুটতেও দেরী হবে না। সংসারের হাল বদলাবে! ভালোভাবে বঁচিবে তারা { অমৃত সেই আশা নিয়েই পড়েছে, অনার্স নিয়ে পাশ করেছে। কিন্তু তারপর এই একটা কাজ বেড়েছে। তিন মাস অন্তর এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে গিয়ে কার্ড রিনিউ করে এসো। কি হবে এতে তা জানে না। তবু করতে হয়। বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে জানা-শোনা আত্মীয়মহলে অমৃতের কিছুটা সুনাম আছে ভালো ছেলে বলে। তাই দু’চারটি টুইশানি জুটেছে তাতেই কিছু টাকা রোজগার করতে পারে। কিন্তু এতে কোন নিশ্চয়তা নেই। বেলা হয়ে গেছে। টুইশানি। সেরে এসে অমৃত লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পালা এলে কার্ডাখানা এগিয়ে দিয়ে শুধোয় অফিসের ভদ্রলোককে। -একটা কল-টল আসবে না। স্যার ? ভদ্রলোক কাউণ্টারের ওদিকে মুখ নামিয়ে শুধু যেন বেকার জীবনের পরমায়ু বৃদ্ধির মঞ্জুরী করে চলেছেন। অন্য কথা কানেই তোলেন না। কারণ জানেন এই প্রশ্নের কোনো জবাব তার জানা নেই। তাই চুপ করে থাকেন। তিনি। পিছনকার অপেক্ষমান ভদ্রলোক অমৃতের কথাটা শুনেছে, দেখেছে। নিরুত্তাপ ওই ভদ্রলোককে, তাই জানায় সে ওর কথায় । —উনি তো টেবিল-চেয়ার হয়ে গেছেন দাদা, দারুভূতো মুরারী। ওঁকে কোশ্চেন করেও উত্তর পাবেন না। হঠাৎ ওদিকে মেয়েদের লাইনে একটা গোলমাল ওঠে। মেয়েরাও এখন এই রুটির লড়াই-এ সামিল হয়ে গেছে, ছেলেদের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে মুখোমুখি আসরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। ওদের সুন্দর মুখে ফুটে উঠেছে বিবর্ণতার কালো ছায়া, ডাগর কালো চোখে স্বপ্নহীন-আশ্বাসহীন নিঃস্বতাই আজ প্রকট হয়েছে। ওরাও এই রোদে দাঁড়িয়ে আছে তারই মধ্যে লাইন ভেঙে কোন মহিলা নাকি এগিয়ে এসেছেন, তাতেই মৌচাকে টিল পড়ার মত ব্যাপার শুরু হয়েছে। গুঞ্জরণ তুলেছে। ওই লাইনে একটি মেয়ে। S 8