পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—সুন্দর অনুষ্ঠান হল। আর লোক সমাগমও তেমনি, দেখে তো বুক কঁপিছিল। কাজলবাবু না থাকলে ওখানে গাইতে সাহস হতো না। কাজলবাবুর কথায় সুলেখাদি ওর দিকে চাইল। তার মুখে একটু কাঠিন্য ফুটে উঠেছে--সেটা সাবিত্রীর দৃষ্টি এড়ায় না। সাবিত্রীর ব্যাকুল মন আজ খুশীতে ভরে উঠেছে। সুলেখার চোখে সেটাও ধরা পড়ে । সাবিত্রীর খুশীভরা জগতে তার সন্ধানের আজ অবকাশ নেই। সে হালকা খুশীর রঞ্জন আবেশে ভেসে ভেসে চলছে, হারিয়ে যেতে চায়। সুলেখার চোখের সামনে ওই জগৎটার ছবি অজানা নয়। মনে হয় তার যেন সব হারিয়ে যাবে আর যাকে সে পথের ধুলো থেকে কুড়িয়ে এনেছিল, আশ্রয় দিয়েছিল সেই নিঃস্ব পথের মেয়েটা রাজেন্দ্রাণী হয়ে সব কেড়ে নেবে তার। সাবিত্রী বলে চলেছে। --কাজলবাবুও গাইলেন সুন্দর। আর অটােগ্রাফ নেবার ভিড় কতো, আচ্ছা! লেখাদি কি হবে ও দিয়ে ? আমি তো সরে এসেছিলাম। ভয়ে। কাজলবাবুকে ওরা খুব শ্রদ্ধা করে দেখলাম। সুলেখা তা জানে। ওই কাজলকে সে আরও নিবিড় করে চেনে। সেই চেনার মধ্যে মাদকতার প্রকাশ নেই। কাজল শিল্পের জগতে অনেক কিছু পেয়েছে, কিন্তু একদিক থেকে সে নিঃস্ব, সর্বহারা। সেখানে তার সেই নিরাভরণ শূন্যতার বেদনাকে চিনেছে সুলেখা। দুজনের মনের অতলের সেই জগতের পথে দু'টি মন একত্রে শাস্তির আশ্বাস খুঁজছে। সুলেখার সেই নিভৃত মনোজগতে একটা ঝড় উঠেছে। কালো মেঘখানা সেই আকাশের নীলিমাকে ঘন অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে। সাবিত্রীর মুখে-চােখে একটা জয়ের ঔজ্জ্বল্য ঝকমকিয়ে ওঠে। আর সুলেখার মনে মেঘছায়া নামে। দুটি নারী আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। একজন আর একজনকে বঞ্চিত করে অনেক কিছু পেতে চায়। সুলেখা যেন সাবিত্রীকে সহ্য করতে পারে না। সুলেখা বলে। --রাত হয়েছে। খেয়ে-দোয়ে শুয়ে পড়োগে সাবিত্রী। বলে ওঠে সাবিত্রী। ֆ ՀԳ