পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ সে কথাটার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। সুলেখা নিজেও জানে আজ তার রেকডিং ভালো হয় নি, কোনমতে উতরেছে মাত্র। মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়েছে সে কাজলকে স্টুজিওতে অনুপস্থিত হতে দেখে। তার আজ কোনো অনুষ্ঠান নেই। হয়তো শরীর খারাপও হতে পারে তার। সুলেখা তাই বের হয়েছে ফেরার পথে কাজলবাবুর বাড়ি হয়ে যাবে। বৈকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। রাস্তার ধারে দেওদার গাছে পাখীগুলো কলরব করছে বাসার সন্ধানে। কাজলও যেন এমনি একটি নিভৃত নীড়ের স্বপ্ন দেখেছিল। আর পাশে পেয়েছিল আর একজনকে কাজলকে ঘিরে তাই ওর মন সেই নিভৃত স্বপ্নে হারিয়ে গেছে। কাজলও সাড়া দিয়েছে। কিস্ত ক্রমশ দেখেছে। সুলেখা কোথায় যেন একটা নীরব বেদনার হাহাকার জাগে। সাবিত্রীকে পথ থেকে তুলে এনেছিল সে। কিন্তু সেই মেয়েটি আজ তার খ্যাতি-প্রতিষ্ঠার জগতের শরিকান হয়েছে, সবচেয়ে ভয় হয় সুলেখার ওই সাবিত্রীকে। সুলেখার সব যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই আজ তার নারীমন একান্তে একজনকে পেয়ে সব হারাবার দুঃখ ভুলতে চায়। কাজলের কাছে আজ তার অনেক পাবার স্বপ্ন নিয়ে সুলেখা চলেছে। পরিচিত অনেকে ওকে দেখে, ওরাও হয়তো অবাক হয়েছে কাজলবাবুকে ওর সঙ্গে না দেখে। কারণ ওরা দু’জনকে একসঙ্গে দেখতে অভ্যস্ত। সুলেখা একাই চলেছে চেনা পথ ধরে। বড় রাস্তা ছাড়িয়ে ঝিলের ধার দিয়ে নতুন রাস্তােটা চলে গেছে। সন্ধ্যার আবছা! অন্ধকারে তারাগুলো জুলছে নীরব কামনার অস্তিত্ব নিয়ে। মাঝে মাঝে আসে সুলেখা এখানে। টালিগঞ্জের সবুজ নির্জনে এই বাড়িটাকে ঘিরে তার মনে অনেক স্বপ্নসাধ অনেক কামনার সুর উঠেছে। কত নিভৃত সন্ধ্যায় ইমনের সুরে মেশা কামিনী ফুলের উদগ্র সৌরভের তারা দু’জনে একটি কল্পজগতের গহনে হারিয়ে গেছে। SvSo