পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোসাইটিতে মিশছে রাত্রি, ওই নোংরা বাহ্যিক প্রকাশগুলোকে আভিজাত্যের অংশ বলেই মেনে নিতে গিয়েও তবু পারেন নি ভদ্রলোক । অসহায় মানুষটা মাঝে মাঝে কি চরম সর্বনাশের কালো আধারটাকে দেখে শিউরে ওঠে। তাই বলেছিল আজ অমৃতকে ওই কথাগুলো কি ব্যাকুল স্বরে। --কিছু করতে পারো না তুমি রাত্রির জন্য ? ও অনুনয় করেছিল অমৃতকে। অমৃত জানে না কি সে করতে পারে। তার নিজের কাছে বেঁচে থাকাটা একটা প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। একটা ইনটারভিউ দিয়েছে।--মুরুকৰীও একজনকে ধরেছে। যদিও সেই চাকরীটি হয়ে যায়। তাতে কোনমতে বাঁচার প্রশ্ন সমাধান হবে, কিন্তু যে জীবনে আজ রাত্রি বন্যার ঢলের মত বয়ে চলেছে সেই প্রাচুর্য তার কোনদিনই আসবে না। রাত্রি আমনি আলেয়ার ইশারাতেই পথ হারাবে এই কি নেশায়। তবু মনে হয় অমৃতের রাত্রিও বাঁচতে চায়, একটা আশ্রয় একটু ভালোবাসা সে পেতে চায়। নইলে অমৃতের কাছে ওই হাহাকার ফুটে উঠতো না। তার পথ চেয়ে থাকতো না । অন্ধকার পথ । রাস্তার আলোগুলো নেভানো । লোকচলাচলও নেই। দোকানের ঝাপ বন্ধ। একটু আগেই বোধহয় কোনো গোলমাল হয়ে গেছে। থমথমে ভাবটা চোখে পড়ে। বাড়িগুলোর জানলা-দরজা বন্ধ। এখানে-ওখানে কারা সাবধানে দাঁড়িয়ে আছে, ফিসফাস করে কথা বলছে। অমৃত সতর্ক হয়ে ওঠে। আশপাশে চেয়ে অমৃত এইবার বুঝতে পারে এই অস্বাভাবিক পরিবেশটাির স্বরূপ। একটু তাড়াতাড়ি চলবার চেষ্টা করছে। সামনে কয়েকজনকে গলির অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসে তার পথ আটকে দাঁড়াতে দেখে থামল! কে বলে--দাঁড়ান মশাই! ওর মুখে এসে পড়েছে টর্চের একঝলক আলো। ওরা দেখছে তাকে। অমৃত বুঝতে পেরেছে ওরা নিরস্তু নয়। অন্ধকারে ঠিক ঠাওর করতে পারে না তাদের। একরকমই মুখ, পরণে ময়লা জামা-প্যান্ট, ওদের চোখে মুখে হিংস্রতার কাঠিন্য ফুটে উঠেছে। ওরা ঘিরে ফেলেছে অমৃতকে। কারো হাতে রড, কারো হাতে ছোরা; অমৃতের মুখে উলসে ওঠে ওদের টর্চের আলো। >\ー)8