পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগেকার সেই পরিচয় নিয়েই কাজল এগিয়ে এসেছে তার দিকে, আর তার যোগ্যতার জন্যই অনুষ্ঠানে--আসরে ফিল্মো গান গাইতে পায়। আজ সুলেখাদি সাবিত্রীকে কাজলবাবুর ওখানে দেখে চমকে উঠেছিল। যে ভাবে বের হয়ে এসেছিল সুলেখাদি সাবিত্রী তাতে অবাক হয়েছে। সাবিত্রীর কাজলবাবুর কাছে যাওয়াটাও সুলেখাদি পছন্দ করে নি। আজ সাবিত্রী সুলেখাদিকে যেন সবচেয়ে বেশী আঘাত দিয়েছে। ওর মত সামান্য মেয়ের এই পথে আসার অধিকার নেই, নাম থ্যাতি অর্থ এমন কি কারো ভালোবাসা পাবারও অধিকার নেই। সারা জীবন মুখ বুজে। সব বঞ্চনা সয়ে কোন মতে ধুকে ধুকে বেঁচে থাকতেই তারা এসছে { তাই যেন অভিমানে, কি নীরব যন্ত্রণায় গুমরে ওঠে সাবিত্রীর সারা মন। মানুষ হিসাবে সাবিত্রীকে সব সয়ে বাঁচতে হয়, তবু অকৃতজ্ঞ হতে চায় সে। সুলেখাদির ঋণের বোঝা তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে। সাবিত্রীর দুচোখ জলে ভরে ওঠে। সে বলে। —এ আমি চাই নি সুলেখাদি। ওরা আসে-বার বার আমাকেই অনুরোধ করে। অনুষ্ঠানে যাবার জন্য। প্লেব্যাক করার জন্য তুমি যদি অমত করো, আমি গানই গাইবো না। যেমন ঝিগিরি করছিলাম, তেমনিই ওই সব কাজ করবো, তবু তোমাকে আঘাত দেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা যেন না হয়। শিল্পী হয়ে বঁাচার চেয়ে মানুষের পরিচয়েই আমি বাঁচতে চাই সুলেখাদি। এইটুকু পাবার জন্য আমি বিবেক মনুষ্যত্ব-কৃতজ্ঞতা হারাতে চাই না-চাই না। সাবিত্রী কি উত্তেজনার আবেগে ভেঙে পড়ে। ওর কণ্ঠস্বর অশুরুদ্ধ হয়ে আসে। সুলেখা ও কে দেখছে। আজি দুটি চিরন্তন নারী মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে নিজের স্বার্থের লড়াই-এ। একজন অনেক হারিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে।--অন্যজন এই সব পাওয়াকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে সেই নিঃস্ব জীবনে ফিরে যেতে চায়। তার মনুষ্যত্বের পরিচয় নিয়ে। সব পেয়েও সে এতো কিছুকে ধূলোমুঠোর মতই তুচ্ছ জ্ঞান করে। S8O