পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুধাময়ীরাও মনে হয় কোন সূখবর থাকলে অমৃত নিজেই তা জানাতো। সেও চেষ্টার কসুর করছে না। মা তাকে ঐসব বলে অমৃতের দুঃখটাকেই বাড়িয়ে তুলেছে মাত্র ভুল করে সে। মায়ের মন অসহায় বেদনায় এই হদয়হীন ভুলগুলোকে স্বীকার না করে পারে না মনে মনে । বাসস্তবাবু এই রোদেও এগিয়ে চলেছেন। এককালে শক্তসমর্থ পেটা স্বাস্থ্য ছিল। সেদিনের কঠিন জীবনযাত্রা, সেই উত্তেজনাময় দিন যাপন-তারপর দীর্ঘ দিনের কারাবাস তার দেহমানের সেই কাঠিন্যকে ভেঙে দিয়েছিল যৌবনেই। কিন্তু তাতেও হার মানেন নি। সেদিন বিক্রমপুর পরগণার গ্রামে মাস্টারি করে দিন কেটে যেতো, বাড়ির জমিজারাত থেকেও আয়-টায় ছিল। হঠাৎ সেই নিশ্চিন্ত দিনগুলো কোন অন্ধব 'রে হারিয়ে গেল। দেশবিভাগের আবর্তে । সেই ঘর, -পায়ের নীচে মাটি হারিয়ে আজ এই দেশে এসে বৃদ্ধ বয়সে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরছেন। বাঁচার আশায় খুঁকছেন। তাই এসেছেন এই অফিসে। দপ্তরে দরখাস্তাখানা জমা দিয়ে বসে আছেন বাসস্তবাবু। রজনী, ভুবনবাবু ওরা এখন নাকি এ্যাসেমব্রিতে। ওদের সঙ্গে দেখা করা দরকার। কেরানীবাবুই বলেন-ওঁদের ফেরার ঠিক নেই। কাজের মানুষ। বাসস্তবাবু রোদে গরমে হাঁপিয়ে পড়েছেন। বাইরে রাস্তায় তখনও পিচাগলার উত্তাপ উঠছে। বের হয়ে হেঁটে ঘরে ফেববার সাধ্য নেই। তাছাড়া এতদূর এসে দেখা না করে ফিরতে মন চায় না। তাই বলেন---একটু বসে দেখি, যদি ওরা ফেরেন। হ্যা বাবা, একটু খাবার জল পাবো ? তেসটা পেয়েছে ভয়ানক। গলা শুকিয়ে আসে তার। কেরানীবাবু গজগজ করেন। ওকে সরাতে পারলে এই পড়ন্ত বেলায় তবু বিশ্রাম করা যেতো, কিন্তু বুড়োর দলের জন্য শাস্তি নেই। ওরা কবে অতীতে কি করেছিল তারই দাবী নিয়ে এখনও অনেক কিছু পেতে চায়। দপ্তরের কর্তাদের অনেকের সঙ্গে চেনা-জানা, আর কিছু না হােক ভালো-মন্দ কিছু তাদের কাছে লাগিয়ে বিপদে ফেলতে পারে। 总@