পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেবার তো কার কাছে প্রণামী চেয়ে যা ঝামেলায় পড়েছিল তার কথা নেই। সেই বখেয়া ছাড়াতে কম কাঠ-খড়ি পোড়াতে হয়েছিল ? সেই থেকে গোবিন্দ সেন সামলে নিয়েছে। তবু ওদের দেখতে পারে না। বুড়োর জল খাবার কথা শুনে মনে মনে বিরক্ত হয় গোবিন্দ সেন। ঘাটের মড়ার দল এখানে ধুকতে আসে আর তাদের জ্বালায়। বসন্তবাবু ওকে কথাটা আবার বলেন—একটু জল——খাবার জল ? গোবিন্দ সেন বলে ওঠে,-ওই কল আছে, যান। এগিয়ে গেলেন বসন্তবাবু। কলের জল তো নয়-চায়ের গরম জল, চা-পাতা দিলেই লিকার হয়ে যাবে। দুপুরের রোদে ট্যাঙ্কগুলো তেতে উঠেছে। একটোক জল মুখে দিতে জিব পুড়ে যায়, তৃষ্ণা নিয়েই এসে বেঞ্চে বসলেন বসন্তবাবু। গরমে ঘামছেন; তবু চােখ বুজে আসে ক্লাস্তিতে। ওপাশের ঘসা কঁচের পার্টিসান ঘেরা ঘর, একজস্ট ফ্যান ঘুরছে। বোধহয় এয়ারকুলার লাগানো। বসন্তবাবু যেন স্বপ্ন দেখছেন। রজনী আর ভূপেনবাবুর সঙ্গে বসন্তবাবুও সেবার নীলবাড়ি ট্রেন ডাকাতিতে ছিল। বাসস্তবাবুই ছিলেন সেই এ্যাকশনের প্ল্যানমেকার। তার সাহস বুদ্ধি তখন ঢাকার বিপ্লবী দলের কাছে স্বীকৃত। রজনীর তখন গোঁফ ওঠে নি। আর ভূপেনকে দেখেছিলেন হিলিতে। বসন্তবাবুর নামে পুলিশের ওয়ারেন্ট ঘুরছে। তবু দলের জন্য টাকা চাই। যোগ্য কর্মী চাই। বাসস্তবাবুই এদের এনেছিলেন। আরও কত ছেলের কথা মনে পড়ে তাদের তিনিই দলে আনেন। ভূপেন, রজনী এখন নামকরা নেতা। কয়েকবার এম-এল-এ হয়েছে। রজনী। এবার তাই মন্ত্রী করা হয়েছে তাকে। সেই ছেলেটার ছবি আজও ভেসে ওঠে বাসস্তবাবুর ছোখের সামনে। রাতের অন্ধকারে ওরা লাইনের ধারে বসে আছে ঝোপের মধ্যে। খবর আছে অনেক ক্যাশ আসছে। এই ট্রেনে--দলের টাকা দরকার। তাই বিদেশী সরকারের টাকার দিকেই তাদের নওজর। ওই কৃত্যাশ লুট করতে হবে সব। ট্রেনখানা কাছাকাছি এলেই আগেকার ব্যবস্থামত চেন টানা হবে; রাতের অন্ধকারে ওই গার্ড ভ্যানের উপর চড়াও হবে তারা। ܠ ܛܠ