পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—-খবরদার এসব করবে না। ডিসিপ্লিন জানো না ? একটা ধাক্কা দিয়ে তাকে লাইন থেকে ঠেলে বাইরে বের করে দিল, বসন্তবাবুও রাস্তার উপর ছিটকে পড়েছেন। এইবার। তবু গাড়িটাড়ি ছিল না। তাই রক্ষে। হাঁটুটা ছড়ে গেছে।--কাপড়ে লেগেছে ময়লা, কাপড়ের এই জায়গা ওই ঘসটানিতে ফেঁসে (20छ । বসন্তবাবু কোনরকমে লাঠিটা কুড়িয়ে ওদিকের লোকজনের ভিড় জমা ফুটপাথে উঠলেন। কী তীব্র অপমানে ওরা দু'চোখ ফেটে জল নামে। ওই ছেলের দল জানে না, চেনে না। অতীতের বসন্ত মজুমদারকে। এককালের বিপ্লবীদের মধ্যে বিশেষ শ্রদ্ধেয় পরিচিত একটি মানুষ ছিলেন তিনি। ডিসিপ্লিন!। ওই নিয়মানুবর্তিতাই আর ত্যাগ ছিল তাদের মূলমন্ত্র। জীবনকেও তারা উৎসর্গ করেছিলেন দেশের জন্যে, আজ তারই এই প্রতিদান। চোখে জল ভরে আসে। ওই কর্মচারীদেব শোভাযাত্রা চলেছে। ওদের অনেকেই ভালো মাইনে পায়, মাসকাবারি বন্দোবস্ত । টেরিলিনের দামী পোষাক ওদের পরণে। পায়ে দামী জুতো। সমাজের মধ্যে তবু ওরা কিছুটা ভালো আছে, নিশ্চিন্ত আছে। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যেই ওরা দল পাকিয়ে পথ রুদ্ধ করেছে। জহির করছে নানা বড় বড় কথা। কিন্তু দেশের সামগ্রিক কল্যাণের লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্যে তাদের কি ত্যাগ অ’< সাধনা আছে তা জানা নেই বসন্তবাবুর। ওরাও সেটা ভাবে নি। হাঁটুটায় চােট লেগেছে, থেতিলে গেছে। জালা জ্বালা করছে। এই জ্বালাটা দেহের সীমানা ছাড়িয়ে মনের গভীরেও বেজেছে বাসস্তবাবুর। লোকজন দেখেছে তাকে। কোনরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই এদের কৌতুহলী দৃষ্টির বাইরে সরে গিয়ে দাঁড়াতে চান। এ অপমান অসহ্য বোধ হয়। ধীরপায়ে এগিয়ে চলেন। কার্জন পার্কের এদিকে গাড়িগুলো সারবন্দী আটকে আছে। বৈকালের দিকে বকমারি পশরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীর দল। ফুচকা-দহিবড়া-চাটের খদেরই বেশী। বসস্তবাবু নিরাসক্ত দৃষ্টি মেলে একটু এগিয়ে এসে রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। তখনও উত্তেজনার ভাবটা কাটে নি। হাঁপাচ্ছেন। একটু দাঁড়িয়ে দম নিতে থাকেন। সামনেই ওই শহীদ মিনার। ওর নীচের মাঠে নানা বক্তৃতা—অনেক আশার কথা শোনানো হচ্ছে তারস্বরে তাও কনে আসে। এক নেতা যে কথা বলেন,-আবার এই ময়দানেই সেই কথাগুলো পরে বদলে যায়। এই পালাবদল-রূপবদলের নীরব সাক্ষী ওই শহীদ মিনার। ওর স্তরে স্তরে কতো vòS