পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাবিত্রীও বলতো।--আর তুমি একা বেঁচে আছো ? কাজল তবু গান গাইতো। কাজলের মা এটাকে খুশি মনে নিতে পারতেন না। বলতেন। —থাক। আর জ্বালাসনে বাবা। সাবিত্রীর মনের আকাশে সেই সুরের আলো আজও রয়ে গেছে। ওই ভাষা, বাণী আর সুর তার মনকে আজকের কঠিন পরিবেশের বাইরে সেই বেদনাবিধুর আনন্দস্পর্শময় একটি স্বপ্নজগতে নিয়ে গেছে। কাজলবাবু আজি নামকরা গাইয়ে। রেকর্ড-রেডিও-সিনেমার প্লেব্যাক করছেন। বালিগঞ্জের কোথাও উঠে গেছেন কী বছর আগে তিলজলার সেই এদো বাড়িটা থেকে। আর লক্ষ্য করেছে সাবিত্রী সেই দিন থেকেই ওই বাড়ির প্রাণস্পন্দনাটুকুও যেন থেমে গেছে। সুর মুছে গেছে। --সাবিত্রী। সা-বি-ত্রী। কর্কশ বেসুরো গলার বিকট চিৎকারের রেশ এই সুরের জগতকে কি কঠিন্যে ভরে তুলেছে। সেলাইঘরের দিদিমণি ডাকচে তাকে। নীচের ঘর থেকে খ্যানখ্যানে গলা তুলে। সাবিত্রী বের হয়ে গেল কোণ থেকে উঠে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও । সুলেখা লক্ষ্য করছিল সাবিত্রীকে, মেয়েটা সুরের মায়ায় আটকে পড়েছে। তালে তালে মাথা নাড়ছিল, হঠাৎ কর্কশ স্বরে চমকে উঠে চলে গেল সস্তপণে এঘরের দরজাটা বন্ধ করে } —-কোথায় থাকিস ? ডেকে-হেঁকে পাত্তা মেলে না ? সেলাইঘরের বড়দি তর্জন গর্জন করে ওঠে। মেশিনের বিশ্রী ঘটঘট শব্দ উঠছে। ওদিকে কঁচি দিয়ে টেবিলের উপর দু’জন শুকনো চিমড়ে চেহারার মেয়ে কাপড় থেকে কি ছাঁটাই করছিল, লক্ষ্মী বলে সবিত্রীকে ঢুকতে দেখে। -ওকে আর পাবে কোথায় সরলাদি, সাবিত্রীর কাছে এসব ভালো লাগবে কেন ? গানের ঘরের ছােকরা তবলচী-ওকেই দেখছিল হাঁ করে। সাবিত্রী কি লজ্জায় রাগে জুলে ওঠে। প্রতিবাদ করে সে-কি বলছে লক্ষ্মৗদি ? WS