পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লক্ষ্মীদির শুকনো তোবড়ানো মুখে কি একটা হাসির আভাস জাগে--সাবিত্রী জানে স্বামীর সঙ্গে লক্ষ্মীদির কোনো সম্পর্ক নেই। একই থাকে এ’পাড়ার দিকে একটা ঘর নিয়ে আর টুকটাক সেলাই-এর কাজ করে দিন চালায়। কৰ্কশ মুখরা মেয়ে--- চেহারাটাও পাকিয়ে দড়ি হয়ে গেছে, তবু জিবের ধারা যায় নি। সেলাই দিদিমণি সরলাকে লক্ষ্মী ওই কথাগুলো শুনিয়ে আর একটা বিশ্রী কল্পনা করে খানিকটা আনন্দ পাচ্ছে। ওর ব্যর্থ বঞ্চিত মন সেই জৈবিক তৃপ্তিটা পেতে চায়— এইভাবেই আক্রমণ করে। লক্ষ্মীদি বলে। -চোখ-কান তো আছে। দেখতেও পাই--শুনতেও পাই। তা লজ্জা কিসের? সোমািত্ত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এক-আধটু এমন হয়। তবে হ্যা-যেন বাড়াবাড়িটা না ঘটে। সামলে থাকিবি। সেলাইঘরের মেয়েরা অনেকে মুখ টিপে-কেউ ফিকফিক করে হাসছে। এই বিশ্রী কথাগুলো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে। দুঃসহ লজ্জায় সাবিত্রীর মাথা নুইয়ে আসে । সেলাইঘরের বড়দিদিমণি সরলা মুখখানা বুলডগের মত ভারী করে বলে। —এসব কথা যেন আর না শুনি সাবিত্রী। মেয়েদের ইস্কুল ওসব বিশ্রী কাণ্ড ঘটতে থাকলে জবাব দিতে হবে তোমাকে । লক্ষ্মৗদি হাসছে। এ চাকরীটিারও দরকার সাবিত্রীর, এই ঝিগিরিও। তার কাছে ফ্যালনা নয়। তাই সাবিত্রী আর্তকণ্ঠে বলবার চেষ্টা করে সরলাকে। ---বিশ্বাস কৰুণ দিদিমণি, ওসব মিথ্যে কথা । সরলা ওর দিকে চাইল । সাবিত্রী জানে লক্ষ্মীদির দু’একটা ঘটনা। ও-পাড়ায় তার দু-একজন বান্ধবী আছে তাদের কাছেই শুনেছে কোন এক আধাবুড়ো দোকানদারের সঙ্গে লক্ষ্মীদির ভাবসারেব কথা। তাই নিয়ে পাড়ার ছেলেরাও হামলা করেছিল তার দোকানে। সেই লক্ষ্মীদিকে তার সম্বন্ধে একথা বলতে দেখে অবাক হয়। সাবিত্রী সে সব নোংবা কথা বলতে পারে না। তবু নিজের সম্মান বঁাচাবার জন্যই প্রতিবাদ করে সে। সরল্যাদি সাবধান করে দেয় সাবিত্রীকে । 8 ○