পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

–এ যে চড়া সুরে গায় র্যা?—তাই দেখছি। খাম্বাজ রাগিনী বাবা। সেই থেকে ওই নামেই ওকে ডাকে তারা। সাবিত্রী শুনেছে। ওর সম্বন্ধে নানা মন্তব্য। তাই চা আনতে ভালো লাগে না তার। আজ তবু মনে হয় এই মেয়েদের তুলনায় তারা অনেক ভালো। একটু প্রেম জানাবার চেষ্টা করা মাত্র, কিন্তু লক্ষ্মীদিরা ? বিষধর সাপের মত বিষ-ছোবল মারার জন্য উদ্যত হয়ে আছে। সাবিত্রীকে চাকরীটা রাখতে হবে। তাই চায়ের কেটলি হাতে করেই নেমে গোল রাস্তায় ২ ওপাশের ঘর থেকে মেয়েদের সেই গানের সুর ভেসে আসে। সুলেখাদির মিষ্টি গলাটা ওদের সকলের সুরের আকাশে যেন ডানা মেলা পাখীর মতই স্বচ্ছন্দ গতিতে ভেসে ভেসে চলেছে কোন নির্জন ছায়াবন ঘেরা দিগন্তের ইঙ্গিত নিয়ে। রৌদ্রমাখানো অলস বেলায় বনমর্মিরে ছায়ার খেলায়। এই ভাবজগতে লক্ষ্মীদির নোংরা মস্তব্যের ঠাই নেই, সেলাইঘরের বড়দিদিমণি সরল্যাদির কঠিন শাসনি নেই। একটি স্মৃতি সুরভিমুখর জগতে একটি কুমারীমন শুচিস্নাত পরিবেশে কোন কল্পনাতীত জগৎকে যেন প্রত্যক্ষ করেছে তার সব অধরা রূপ রস বর্ণ গন্ধের উপস্থিতিতে। চা নিয়ে ফিরছে। সাবিত্রী দোকান থেকে। তাদের স্কুলের কাছে হঠাৎ একটা ট্যাক্সি থামতে দেখে দাঁড়াল সাবিত্রী। গানের স্কুলের ছাত্রীদের অনেকেই মাঝে মাঝে ট্যাক্সিতে না হয় বাড়ির গাড়িতে আসা-যাওয়া করে। গানের স্কুলের ছাত্রীসংখ্যাই বেশী। নামকরা গাইয়েরাও অনেকে আসেন। তাদের আসছে বোধহয় । সাবিত্রী কেটলিতে চা নিয়ে ঢুকছিল। ওদিকের দরজা দিয়ে, দাঁড়িয়েছে। থমকে। হঠাৎ অবাক হয় সে, হাত-পা ঝিমঝিম করছে। পায়ের নীচে থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে ওর। কেমন বিভ্রাস্ত চাহনিতে দেখছে কাকে। ট্যাক্সি থেকে নামল একটি তরুণ, পরনে গরদের পাঞ্জাবী, দামী কঁচি ধুতির কেঁচোটা মাটিতে ঠেকছে, পায়ে সাদা কাজ-করা সিপার, চোখে কালো চশমা পরে 8良