পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহজ স্বচ্ছন্দ গতিতে ট্যাক্সি থেকে নেমে কোন দিকে না চেয়ে উপরে উঠে গেল। ওর চাল-চলনে একটা ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে ওঠে। হাতের চা-ভর্তি গরম কেটলিটা যেন চলকে পড়বে। সাবিত্রী রেলিংটা ধরে সামলে নিল কোনমতে । ওই তরুণটিকে সে চেনে, আজকের তার এই দৈন্যদশা আর কেন্টলি হাতে চা কিনে আনার চাকরীর পরিচয় সে দিতে পারে না কাজলদার কাছে। তাই সরে এল সাবিত্রী। আজকের নামকরা সঙ্গীতশিল্পী কাজল মুখাজী তাকে চেনে না বোধ হয়। সাবিত্রীর মনে হয় সমাজ সংসার সবই একটা চাকার মত গতি নিয়ে ঘুরছে। আর সেই উপরনীচুর গতিবেগে একদিন তারা ছিটকে পড়েছে। অতীতে দু’জনে একসঙ্গেই ছিল। হয়তো ভালো লেগেছিল কাজলের সেদিনের সেই সহজ জীবনযাত্রা-পথের একটি সাধারণ মেয়েকে । আজ কাজল সেই চাকার তালে তালে সমাজের অনেক উপরিতলায় উঠে গেছে, সেখান থেকে নীচের দিকে নজর চলে না। দেখা যায় শুধু অন্ধকার একটা আতলাস্ত গহ্বরকে। সাবিত্রী সেই অন্ধকার তমসাচ্ছন্ন অতলে হারিয়ে গেছে। অতীতের সব পরিচয় মিথ্যা আর বিস্মৃত বেদনায় পরিণত হয়েছে। চা এনে সরল্যাদির কাপে ঢেলে রাখলো। সরল্যাদি চায়ে চুমুক দিয়েই ফুসিয়ে ওঠে সাবিত্রীকে। --ঠাণ্ডা জল করে এনেছে ? এতক্ষণ কোথায় ছিলে ? চায়ের মীেতাত বিগড়ে যেতে ওদের মেজাজও বিযিয়ে গেছে। অন্য শিক্ষিকা যমুনাদিও বলে। —চায়ের দোকানের ছেলেগুলোর সঙ্গে দেখি কি কথাবার্তা বলে চা আনতে ਨੇ ? সাবিত্রী সেদিন ওদের ধমক দিয়েছিল, আর সেটাই যমুনাদির নজরে পড়েছিল, যমুনাদিও হয়তো কিছু ভেবেছিল। আজ সেই ইঙ্গিত করে। ওরা সকলেই কথাটা বেশ উপভোগ করছে। সাবিত্রীর আজ একটু দেরী হয়েছে চা নিয়ে ফিরতে। ছেলেরা কেউ আজ তাকে বিব্রত করে নি। একটা যেন নীরব সন্ধি করেছে তারা। দেরী হয়েছিল। অন্য কারণে। SS