পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অমৃতের কথায় রাত্রি বলে। —একটু অপেক্ষা করুন, আমি এখুনিই আসছি। ওর সঙ্গে কথা বলে। দরজাটা খুলে রাত্রি কার সঙ্গে কথা বলছে গলার স্বর একটু নামিয়ে। কিন্তু ওদিকের ভদ্রলোক গলা এক পর্দা চড়ায় তুলে জানায় বেশ মেজাজ নিয়ে। -আজি তো ডেট দিয়েছিলেন। এই নিয়ে তিন মাসের ভাড়া বাকী হতে চললো। কতদিন আর ঘুরবো বলুন ? অমৃত চুপ করে ওই চড়া গলায় শাসনিটা শুনছে। রাত্রি ওকে কি বলবার চেষ্টা করে। কিন্তু বাড়িওয়ালার সরকার সে সব কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করে না। তাই জানায় সে কঠিন স্বরে। -ওসব বাজে কথা ছাডুন। সামনের সপ্তাহে আসছি, টাকা আমার চাই, না হলে ডিফল্টার চার্জ দিয়ে কোর্টে নালিশই করতে হবে। ওঁকেও জানিয়ে দেবেন। ওসব ইংরাজীওলাকে ঢের দেখেছি। কথাগুলো সদৰ্পে জানিয়ে ভদ্রলোক তেতলার ফ্ল্যাটের দিকে এগোলো। রাত্রি দরজাটা বন্ধ করে একটু দাঁড়িয়েছে ওখানে। ও জেনেছে অমৃতবাবুর এসব কথা শুনতে বাকী নেই। লজা বোধ করে রাত্রি। তাদের পারিবারিক জীবনের এই দৈন্য আর অসহায় অবস্থাটা জেনেছে অমৃত, সেখানে গোপন করার কিছুই নেই। রাত্রিও গোপন করতে চায় না। রাত্রির মনে হয় তার মনের অনেক গোপন যন্ত্রণা আর হতাশাকে দেখেছে। ওই অমৃত। রাত্রি যেন ওর কাছে সহজ হতে চেয়েছে, তাই লুকোবার চেষ্টা করে নি ওসব। চুপ করে এসে ঘরে ঢুকলো রাত্রি। মান হেসে বলে সে। —দেখছেন চাকরীর কেন দরকার? তাই ঘুরছি হন্যে হয়ে। অমৃত হেসে ফেলে। ওর কাছে জীবনের এই যন্ত্রণাটা আরও কঠিন, আরও নগ্নরূপে ফুটে উঠেছে। অমৃত বলে। —এ আর নেতুন কি? এ সব আমারও দেখতে হয়, এসব কিছু আমিও চিনি। রাত্রি ওর দিকে চাইল। অমৃতের পোশাকে ওর মুখচােখে সেই অভাবের ছায়াটার সঙ্গে নিজেরও একটা নিবিড় সাযুজ্য খাঁজে পায় রাত্রি। ক্লাস্ত স্বরে বলে রাত্রি। & S.