পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুধাময়ী বলে ওঠে । রেশন তোলা হয় নি এখনও, চিনি, চা দুধ কিছুই নেই। কথাটা বসস্তবাবুও জানেন। খেয়াল হয়নি। তাই ওই প্রসঙ্গ উঠতে নিজেকেই এব জন্য দায়ী আর দোষী মনে করে চুপ করে গেলেন। সুধাময়ীও দাঁড়ালো না, ভিতরের বারান্দায় চলে এল। নিজেরই বিশ্রী লাগে। বৃদ্ধ লোকটার আজ কোনো দাবী নেই। শুধু একটু চা চায় মাঝে মাঝে, আর নেহাত জীবন ধারনের জন্য যতটুকু না হলে নয়, ততটুকুই তার ঢাওয়া। কিন্তু তাও জোটে না ; সুধাময়ীরাও খারাপ লাগে কথাটা ভাবতে তাই সরে আড়ালে পালিয়ে এল। বাসস্তবাবু আবার দরখাস্তখানা নিয়ে পড়েন। এছাড়া আপাততঃ করার কিছু নেই। দেবখাস্ত নয়, এ যেন ভিক্ষাপাত্র নিযে আবেদন করা। মাঝে মাঝে মনে হয বাসস্তবাবু এসব করবেন না। নিজের কাছেই কথাটা ভাবতে বিশ্রী লাগে। অতীতের ক্ষিপ্ত বাধা-ভাঙা যৌবন সেদিন অগ্নিমস্ত্রে দীক্ষা নিয়ে মেতে উঠেছিল। ব্রিটিশের ইস্পাতকঠিন ভিত্তিতে প্রচণ্ড আঘাত হানতে চেয়েছিল, সেদিন সন্ত্রাপ্ত হয়ে উঠেছিল। ইংরেজ শাসকের দল, দামাল ছেলেদের সেই বিদ্রোহে! তরুণ বসন্তবাবু ছিলেন তাদেরই একজন। সেদিন তারা চেয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হবে। “বন্দেমাতরম’-এর প্রদীপ্ত মন্ত্রে সারা জেগে উঠেছিল। বৃহৎ কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন তারা। কতো বন্ধু-বান্ধব ফাঁসির মঞ্চে আত্মত্যাগ করেছিলেন, কতো জন গেছেন আন্দামানের নিভৃত নির্বাসনে। বাসস্তবাবুও তিন বছর আত্মগোপন করে কাটিয়েছিলেন, তবু সংগ্রাম থামে নি। আসামের বন-পাহাড় অঞ্চলে সেবার ধরা পড়েছিলেন তার পর থেকে টানা সাত বছর জেলে । কিন্তু কোনদিনই স্বপ্নেও দেখেন নি যে আজকের মত এই দুঃসহ দরিদ্র্য নিয়ে দিন কাটাতে হবে। অতীতের সেই আত্মত্যাগের জন্য আজকের উত্তরপুরুষদের কাছে ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে ঘোর বেদনাদায়ক। তোমরা আমাদের মূল্য দাও সেদিনের সংগ্রামের এ কথাটা জানানোই চরম অপমানের। r বসন্তবাবু ভাবতে চান না সেই কথাগুলো। দেখেছেন। আজকের তরুণ, আজকের নেতারাও তাদের কি চোখে দেখেন। সেই দৃষ্টিতে ফুটে ওঠে অনুকম্পা, দয়া! আজকের তরুণবা চেনে না। তাদের। ঘৃণা করে। و