পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরল্যাদি কাজলবাবুকে শুধোয়। -কফি ঠাণ্ডা হয় নি তো ? সাবিত্রী কঠিন ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাজলবাবু পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বলে--না। ঠিক আছে। সাবিত্রী সরে এসেছিল। কাজল তাকে চিনতে চায় নি, এটা বুঝেছে সে। অতীতের সব অন্ধকারকে অস্বীকার করে কাজল মুখাজী আজ নতুন আলোর জগৎকে মেনে নিয়েছে। সাবিত্রীর সব আশার সূর থেমে গেছে। জেগে উঠেছে। সারা মনে একটা কাঠিন্য। বাবার কথা মনে পড়ে। অনেক আঘাত, অবহেলা আর বেদনায় এতদিনের আদর্শবাদী মানুষটি আজ বদলে গেছে। সাবিত্রীও ঠিক তেমনি একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সাবিত্রীর মনে হয়। গানই শিখতে হবে তাকে। কাজলকে সেও দেখাবে যে সে অযোগ্য নয় । এমনি দিনে সুলেখাদির প্রস্তাবটা এসেছিল তার কাছে। সুলেখা অবশ্য নিজের স্বার্থের কথা ভেবেই সাবিত্রীকে ওই কথাটা জানিয়েছিল। সুলেখাদের বাড়িতে মা আর সে থাকে। মায়ের বয়স হয়েছে, সুলেখাও গান-রেকর্ডিংটুইশানি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাড়ির কাজও করতে পারে না। তেমন বিশ্বস্ত লোকজনও মেলে না। ফলে বিব্রত বোধ করে সুলেখা মায়ের জন্য। সাবিত্রীকে দেখেছে সে, বিশ্বাস করতে পারে তাকে। মেয়েটি নম্র-ভদ্র। তাই সুলেখা কদিন ভেবে, কথাটা পাড়ে সাবিত্রীর কাছে। —আমার ওখানে থাকবে, কাজকর্ম্ম একটু দেখবে। গানও শিখবে। যদি আসো। ভেবে দেখো। সকালে এসে দুপুরে বাড়ি গেলে—আবার এলে বৈকালোঁ, সন্ধ্যায় ফিরে যাবে। তোমাদের বাড়ি থেকে খুব দূরও নয়। আমাদের বাড়ি। সাবিত্রী কথাটা শুনে কি ভাবছে। তবু কিছু বাড়তি টাকা পাবে। নিজেরও সুবিধে হবে। গানটা শিখতে পারবে। সেটা বড় কথা গান তাকে শিখতেই হবে, দাঁড়াতে হবে নিজের পায়ে। তার জন্য সাবিত্রী আজ সব কিছু করতে রাজী। তাদের বাড়িতে গানের পরিবেশ নেই। গান শিখতে হলে তাকে ও বাড়ি ছাড়তে হবে। তাই জানায় সাবিত্রী। —কথাটা একটু ভেবে দেখি সুলেখাদি। মাকেও বলা দরকার। বাবা-মা আছেন তাদের মতামত চাই। Գ Տ