পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাসছেন বসন্তবাবু, ওদের চাওয়ার শেষ নেই। এই চক্রে তাকে বেঁধে রেখেছে তারা। সেদিনের বিপ্লবী মানুষটার আজ নিঃশেষ অপমৃত্যু ঘটেছে। রাস্তার দিক থেকে গোলমালের শব্দ শোনা যায়। বাসস্তবাবু খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে কাগজ পড়ছিলেন। অমৃত তখনও ফেরে নি। অশোক যেন লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। বাসস্তবাবু ওই গোলমালে উৎকর্ণ হয়ে ওঠেন। কোন মিছিল যাচ্ছিল, হঠাৎ ওদিক থেকে কলরব ওঠে। বাধা দিয়েছে। অন্য দল। তাই নিয়ে গোলমালের শব্দ শোনা যায়। চমকে ওঠেন বসস্তবাবু। দেখেছেন এই গোলমাল শহরের সর্বত্র। এতদিন ধরে একদল মানুষ সমাজ-ব্যবস্থােটাকে উল্টে দেবার নাম করে অনেক গালভরা কথার তুবড়ি ছুটিয়েছে, সাধারণ মানুষকে অনেক কিছু আপসে পাইয়ে দেবার আশা দিয়ে তাদের নিজেদের দলে এনে ক্ষমতা অর্জন করেছে। সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠা করে তুলেছে। শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেছে। কথায় কথায় সব কিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আজ ট্রাম-বাস বন্ধ, দোকানপাট খুলতে পারে। না, ওদিকে একটার পর একটা কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এসেছে হতাশার অবসাদ, খেটে খাওয়া মানুষ অনেক আশা করেছিল——সেই আশার কোনটাই পূরণ হয় নি। বরং দুঃখ-দুর্ভোগ বেড়েছে। তারই প্রতিবাদের চিহ্ন ফুটে উঠেছে সমাজের স্তরে স্তরে। সারা শহরের এলাকা ছাড়িয়ে সারা দেশে এরই প্রকাশ, তাই শক্তিমত্ত সেই মানুষগুলোও মৰীয়া হয়ে উঠেছে। —কিসের গোলমাল শুনছি? সুধাময়ী চমকে ওঠে। বাসস্তবাবু বলেন-ওতো লেগেই আছে। তবু চীৎকার বেড়ে চলেছে। পাড়ার লোকও সতর্ক হয়েছে। হঠাৎ কড়াটা কে নাড়ছে। দরজা খুলে দিতে অমৃত বাড়ি ঢুকলো। চােখে মুখে তার উত্তেজনার আভাস। সেই ই জানায়। আমি শুধু একা - ৬ br>