পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
আরণ্যক

এই বালুময় তীরে—এখন যাহা বিরাট পৰ্বতে পরিণত হইয়াছে। এই ঘন অরণ্যানীর মধ্যে বসিয়া অতীত যুগের সেই নীল সমুদ্রের স্বপ্ন দেখিলাম।

পুরা যতঃ শ্রোতঃ পুলিনমধুনা তত্র সরিতাম্‌

 এই বালু-প্রস্তরের শৈলচূড়ায় সেই বিস্মৃত অতীতের মহাসমুদ্র বিক্ষুব্ধ উর্ম্মিমালার চিহ্ন রাখিয়া গিয়াছে-~~-অতি স্পষ্ট সে চিহ্ন-ভূতত্ববিদের চোখে ধরা পড়ে। মানুষ তখন ছিল না, এ ধরণের গাছপালাও ছিল না, যে ধরণের গাছপালা জীবজন্তু ছিল, পাথরের বুকে তারা তাদের ছাঁচ রাখিয়া গিয়াছে, যে কোনো মিউজিয়ামে গেলে দেখা যায়।

 বৈকালের রোদ রাঙা হইয়া আসিয়াছে মহালিখারূপ পাহাড়ের মাথায়। শেফালিবনের গন্ধভরা বাতাসে হেমন্তের হিমের ঈষৎ আমেজ, আর এখানে বিল করা উচিত হইবে না, সম্মুখে কৃষ্ণা-একাদশ অন্ধকার রাত্রি, বনমধ্যে কোথায় একদল শেয়াল ডাকিয়া উঠিল। ভালুক বা বাঘ পথ না আটকায়।

 ফিরিবার পথে একদিন প্রথম বন্য ময়ূব দেখিলাম বনান্তস্থলীতে শিলাখণ্ডের উপর। এক জোড়া ছিল, আমার ঘোড়া দেখিয়া ভয় পাইয়া মযুরট। উডিয়া গেল, তাহার সঙ্গিনী কিন্তু নড়িল না। বাঘের ভয়ে আমার তখন ময়ূর দেখিবার অবকাশ ছিল না, তবু একবার সেটার সামনে থমকিয়া ঈাড়াইলাম। বক্ষ ময়ূর কখনও দেখি নাই, লোকে বলিত এ অঞ্চলে মধূর আছে, আমি বিশ্বাস করিতাম না। কিন্তু বেশীক্ষণ বিলম্ব করিতে ভরসা হইল না, কি জানি, মহালিখারূপের বাঘের গুজবটাও যদি এ রকম সত্য হইয়া যায়?

সপ্তম পরিচ্ছেদ

দেশের জন্য মন কেমন করা একটি অতি চমৎকার অনুভূতি। যারা চিরকাল এক জায়গায় কাটায়, গ্রাম বা তাহার নিকটবর্তী স্থান ছাড়িয়া নড়ে না—তাহারা