পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 98 আরণ্যক মটুকনাথ পূজাৰ্চনা করিয়া দু-তিনটি ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া টোল প্রতিষ্ঠা করিল । এ জঙ্গলে কিছুই মেলে না, সে নিজের হাতে মকাইয়ের আটার মোটা মোটা পুৰী ভাজিল এবং জংলী ধুধুলের তরকারী। বাথান হইতে মহিষের দুধ আনাইয়া দই পাতিয়া রাখিয়াছিল। নিমন্ত্রিতের দলে অবশ্য আমিও ছিলাম । টোল খুলিয়া কিছুদিন মটুকনাথ বড় মজা করিতে লাগিল। পৃথিবীতে এমন মানুষ ও সব থাকে ! সকালে স্নানাহিক সারিয়া সে টোলঘরে একখানা বন্য খেজুরপাতায় বোনা। আসনের উপর গিয়া বসে এবং সম্মুখে মুগ্ধবোধ খুলিয়া সুত্র আবৃত্তি করে, ঠিক যেন কাহাকে পড়াইতেছে। এমন চেচাইয়া পড়ে যে, আমি আমার আপিসঘরে বসিয়া কাজ করিতে করিতে শুনিতে পাই । তহশীলদার সজন সিং বলে--পণ্ডিতজী লোকটা বদ্ধ পাগল ! কি করছে দেখুন হুজুর । মাস-দুই এইভাবে কাটে। শূন্য ঘরে মটুকনাথ সমান উৎসাহে টোল করিয়া চলিয়াছে। একবার সকালে, একবার বৈকালে। ইতিমধ্যে সরস্বতী পূজা আদিল । কাছারিতে দোয়াত-পূজার দ্বারা বাগেদবীর অৰ্চনা নিষ্পন্ন করা হয় প্রতি বৎসর, এ জঙ্গলে প্রতিমা কোথায় গড়ান হইবে ? মটুকনাথ তার টোলে শুনিলাম আলাদা পূজা করিবে, নিজের হাতে নাকি প্রতিমা গড়িবে। ষাট বছরের বৃদ্ধের কি ভরসা, কি উৎসাহ ! নিজের হাতে ছোট প্রতিমা গড়িল মটুকনাথ। টোলে আলাদা পূজা হইল। বৃদ্ধ হাসিমুখে বলিল-বাবুজী, এ আমাদের পৈতৃক পূজো । আমার বাবা চিরকাল তার টোলে প্রতিমা গড়িয়ে পুজো ক’রে এসেছেন, ছেলেবেলায় দেখেছি। এখন আবার আমার টোলে কিন্তু টোল কই ? মটুকনাথকে একথা বলি নাই। অবশ্য ।