পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক SN9Qb কিন্তু শীঘ্রই নূতন প্রজারা ভয়ানক গোলমাল বাধাইল। দেখিলাম ইহারা মোটেই শান্তিপ্রিয় নয়। একদিন কাছারিতে বসিয়া আছি, খবর আসিল নাঢ়া বইহারের প্রজারা নিজেদের মধ্যে ভয়ানক দাঙ্গা শুরু করিয়াছে। জমির আলি নিদিষ্ট কিছু না থাকাতেই এই গোলমাল বাধিয়াছে, যাহার প্যাচ-বিঘা জমি সে দশ-বিঘা জমির ফসল দখল করিতে বসিয়াছে। আরও শুনিলাম সর্ষে পাকিবার কিছুদিন আগে ছটু সিং নিজের দেশ হইতে বহু রাজপুত লাঠিয়াল ও সড়কিওয়ালা গোপনে আনিয়া রাখিয়াছিল, তাহার আসল উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাইতেছে । নিজের তিন-চার শ বিঘা। আবাদী জমির ফসল বাদে সে লাঠির জোরে সমস্ত নাঢ়া বইহারের দেড় হাজার বিঘা ( বা যতটা পারে ) জমির ফসল দখল করিতে চায়। কাছারির আমলাৱা বলিল-এ-দেশের এই নিয়ম হুজুর। লাঠি যার ফসল ९ङiद्र ! যাহাদের লাঠির জোর নাই, তাহার কাছারিতে আসিয়া আমার কাছে কঁদিয়া পড়িল । তাহারা নিরীহ গরিব গাঙ্গোতো প্রজা-সামান্য দু-দশ বিঘা জমি জঙ্গল কাটিয়া চাষ করিয়াছিল, স্ত্রী-পুত্র আনিয়া জমির ধারেই ঘর-বাড়ী তৈরী করিয়া বাস করিতেছিল- এখন সারা বছরের পরিশ্রমের ও আশার সামগ্রী প্রবলের অত্যাচারে যাইতে বসিয়াছে ! কাছারির দুইজন সিপাহীকে ঘটনাস্থলে পাঠাইয়াছিলাম ব্যাপার কি দেখিতে । তাহারা উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া আসিয়া জানাইল-ভীমদাস টোলার উত্তর সীমায় ভয়ানক দাঙ্গা বাধিয়াছে। তখনই তহশীলদার সজ্জন সিং ও কাছারির সমস্ত সিপাইদের লইয়া ঘোড়ায় করিয়া ঘটনাস্থলে রওনা হইলাম। দূর হইতেই একটা হৈ হৈ গোলমাল কানে আসিল । নাঢ়া বইহারের মাঝখান দিয়া একটি ক্ষুদ্র পার্ব্বত্য নদী বহিয়া গিয়াছে।--গোলমালটা যেন সেদিকেই বেশী। নদীর ধারে গিয়া দেখি নদীর দুইপারেই লোক জড় হইয়াছে-প্রায় ষাট-সত্তর জন এপারে, ওপারে ত্রিশ-চল্লিশ জন ছটু সিংএর রাজপুত লাঠিয়াল। ওপারের