পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
আরণ্যক

 —সতের সের সর্থে নিয়েছে। জিতি নি? বলিয়া লাভ কি যে, সে ভীষণ ঠকিয়াছে। এসব জায়গায় এ রকম হইবেই। কেন মিথ্যা আমি ছেদীর কাছে বকুনি খাওয়াইয়া ওর মনের এ অপুর্ব্ব আলাদ নষ্ট করিতে যাইব।

 আমারই অনভিজ্ঞতার ফলে এ বছর এমন হইতে পারিয়াছে। আমার উচিত ছিল ফিরিওয়ালাদের জিনিসপত্রের দরের উপরে কড়া নজর রাখা। কিন্তু আমি নতুন লোক এখানে, কি করিয়া জানিব এদেশের ব্যাপার? ফসল মাড়িবার সময় মেলা হয় তাহাই তো জানিতাম না। আগামী বৎসর যাহাতে এমনধারা না ঘটে, তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে।

 পরদিন সকালে নকূছেদী তাহার দুই-স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা লইয়া এখান হইতে চলিয়া গেল। যাইবার পূর্বে আমার খুপরিতে নকছেদী খাজনা দিতে আসিল, সঙ্গে আসিল মঞ্চী। দেখি মঞ্চী গলায় সেই হিংলাখের মালাছড়াটি পরিয়া আসিয়াছে। হাসিমুখে বলিল - আবার আসব ভাদ্র মাসে মকাই কাটতে। তখন থাকবেন তো বাবুজী? আমরা জংলী হকির আচার করি শ্রাবণ মাসেআপনার জন্যে আনব।

 মঞ্চীকে বড় ভাল লাগিয়াছিল, চলিয়া গেলে দুঃখিত হইলাম।

একাদশ পরিচ্ছেদ

এবার আমার একটি বিচিদ্র অভিজ্ঞতা হইল।

 মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের দক্ষিণে মাইল পনের কুড়ি দূরে একটা বিস্তৃত শাল ও বিড়ির পাতার জঙ্গল সেবার কালেক্টরীর নীলামে ডাক হইবে খবর পাওয়া গেল। আমাদের হেড আপিসে তাড়াতাড়ি একটা খবর নিতে, তারঘোগে আদেশ পাইলাম, বিড়ির পাতার ফুল যেন আমি ডাকিয়া লই।