পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক SS এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তারা যখন বাংলা দেশে যেত-এর উপদ্রব করত তীরধনুক নিয়ে। শেষে রাজমহলে যখন মুঘল সুবাদারেরা থাকতেন, তখন এদের রাজ্য যায়। ভাবী বীরের বংশ এরা, এখন আর কিছু নেই। যা কিছু বাকী ছিল, ১৮৬২ সালের সাওতাল-বিদ্রোহের পরে সব যায়। সাওতাল বিদ্রোহের নেতা এখনও বেঁচে আছেন। তিনি বর্ত্তমান রাজা। নাম দোবারু পান্না বীরবর্দী । খুব বৃদ্ধ আর খুব গরিব । কিন্তু এ দেশের সকল আদিম জাতি এখনও তাকে রাজার সম্মান দেয় । রাজ্য না থাকলেও রাজা বলেই মানে । রাজার সঙ্গে দেখা করিবার বড়ই ইচ্ছা হইল । রাজসন্দর্শনে যাইতে হইলে কিছু নজর লইয়া যাওয়া উচিত। যার যা প্রাপ্য সম্মান, তাকে তা না-দিলে কর্ত্তব্যের হানি ঘটে । কিছু ফলমূল, গোটা দুই বড় মুরগী-বেলা একটার মধ্যে নিকটবর্ত্তী বন্তি হইতে কিনিয়া আনিলাম। এ-দিকের কাজ শেষ করিয়া বেলা দুইটার পরে বুদ্ধ, সিংকে বলিলাম-চল, রাজার সঙ্গে দেখা ক’রে আসি । বুদ্ধ, সিং তেমন উৎসাহ দেখাইল না। বলিল-আপনি সেখানে কি যাবেন ? আপনাদের সঙ্গে দেখা করবার উপযুক্ত নয়। পাহাড়ী অসভ্য জাতের রাজা, তাই ব’লে কি আর আপনাদের সমান সমান কথা বলবার যোগ্য, বাবুজী ? সে তেমন কিছু নয় । তাহার কথা না শুনিয়াই আমি ও বনোয়াৰীলাল রাজধানীয় দিকে গেলাম । তাহাকেও সঙ্গে লইলাম । রাজধানীট খুব ছোট, কুড়ি-পাঁচিশ ঘর লোকের বাস। ছোট ছোট মাটির ঘর, খাপরার চাল-বেশি পরিষ্কার করিয়া লেপাপোছা । দেওয়ালের গায়ে মাটির সাপ, পদ্ম, লতা প্রভৃতি গড়া। ছোট ছোট ছেলেরা খেলা করিয়া বেড়াইতেছে, স্ত্রীলোকেরা গৃহকর্ম্ম করিতেছে। কিশোরী ও যুবতী। মেয়েদের সুঠাম গড়ন ও নিটোল স্বাস্থ্য, মুখে কেমন সুন্দর একটা লাবণ্য প্রত্যেকেরই সকলেই আমাদের দিকে অবাক হই য়। চাহিয়া রহিল।