পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sboe আরণ্যক সত্যই বটগাছতলাটায় দাড়াইয়া আমার মনে এমন একটা ভাব হইল, যাহা এতক্ষণ কোথাও হয় নাই, রাজাকে দেখিয়াও না (রাজাকে তো মনে হইয়াছে জনৈক বৃদ্ধ সঁওতাল কুলীর মত), রাজকন্যাকে দেখিয়াও নয় (একজন স্বাস্থ্যবতী। হো কিংবা মুণ্ড তরুণীর সহিত রাজকন্যার কোন প্রভেদ দেখি নাই ), রাজপ্রাসাদ দেখিয়া তো নয়ই ( সেটাকে একটা সাপখোপের ও ভূতের আডড বলিয়া মনে হইয়াছে )। কিন্তু পাহাড়ের উপরে এই সুবিশাল, প্রাচীন বটতরুতলে কতকালের এই সমাধিস্থল আমার মনে এক অননুভূত, অপরূপ অনুভূতি জাগাইল । স্থানটির গাম্ভীর্য্য, রহস্য ও প্রাচীনত্বের ভাব আবর্ণনীয়। তখন বেল প্রায় হেলিয়া পড়িয়াছে, হলদে রোদ পত্ররাশির গায়ে, ডাল ও ঝুরির অরণ্যে ধনঝরির অন্য চূড়ায়, দুর বনের মাথায়। অপরান্ধুের সেই ঘনায়মান ছায়া এই সুপ্রাচীন রাজ-সমাধিকে যেন আরও গম্ভীর, রহস্যময় সৌন্দর্য্য দান করিল। মিশরের প্রাচীন সম্রাটদের সমাধিস্থল থিবস নগরের অদূরবত্তী “ভ্যালি অব দি কিংস আজ পৃথিবীর টুরিস্ট দের লীলাভূমি, পাবলিসিটি ও ঢাক পিটানোর অনুগ্রহে সেখানকার বড় বড় হোটেলগুলি মরশুমের সময় লোকে গিজগিজ করে -“ভ্যালি অব দি কিংস অতীত কালের কুয়াসায় যত না অন্ধকার হইয়াছিল, তার অপেক্ষাও অন্ধকার হইয়া যায় দামী সিগারেট ও চুরুটের ধোঁয়ায়-কিন্তু তার চেয়ে কোন অংশে রহস্যে ও স্বপ্রতিষ্ঠ মহিমায় কম নয়। সুদূর অতীতের এই অনার্য্য নৃপতিদের সমাধিস্থল, ঘন অরণ্যভূমির ছায়ায় শৈলশ্রেণীর অন্তরালে যা চিরকাল আত্মগোপন করিয়া আছে ও থাকিবে । এদের সমাধিস্থলে আড়ম্বর নাই, পালিশ নাই, ঐশ্বর্য্য নাই মিশরীয় ধনী ফ্যারাওদের কীর্ত্তির মাত-কারণ এরা ছিল দরিদ্র,এদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ছিল মানুষের আদিম যুগের অশিক্ষিতপটু সভ্যতা ও সংস্কৃতি, নিতান্ত শিশু-মানবের মন লইয়া ইহারা রচনা করিয়াছে ইহাদের গুহানিহিত রাজপ্রাসাদ, রাজসমাধি, সীমানাজ্ঞাপক খুটি। সেই অপরাস্ক্রেয় ছায়ায় পাহাড়ের উপরে সে বিশাল তরুতলে দাড়াইয়া যেন সর্ব্বব্যাপী