পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

gw'r আরণ্যক আশে-পাশে মানুষের হস্তরোপিত গাদ্দাফুলের ও সন্ধ্যামণি-ফুলের গাছ । সামনে আর একখানা বড় পাথর, তাতেও সিন্দুর মাখা । বহুকাল হইতে নাকি এই দেবস্থান। এখানে প্রতিষ্ঠিত, রাজবংশের ইনি কুলদেবতা। পূর্বে এখানে নরবলি হইত-সম্মুখের বড় পাখরখানিই যুপ-রূপে ব্যবহৃত হইত। এখন পায়রা ও মুরগী বলি প্রদত্ত হয় । জিজ্ঞাসা করিলাম--কি ঠাকুর ইনি ? রাজা দোবরু বলিলেন – টাড়িবারো, বুনো মহিষের দেবতা । মনে পড়িল গাত শীতকালে গনু মাহাতের মুখে শোনা সেই গল্প । রাজা দো'বরু বলিলেন-টাড়িবারো বড় জাগ্রত দেবতা । তিনি না-থাকলে শিকারীরা চামড়া আর শিঙের লোভে বুনো মহিষের বংশ নির্বংশ ক’রে ছেড়ে দিত। উনি রক্ষা করেন। ফাঁদে পড়বার মুখে তিনি মহিষের দলের সামনে দাড়িয়ে হাত তুলে বাধা দেন-কত লোক দেখেছে। এই অরণ্যচারী আদিম সমাজের দেবতাকে সভ্য জগতে কেউই মানে না, জানেও না-কিন্তু ইহা যে কল্পনা নয়, এবং এই দেবতা যে সত্যই আছেনতাহা স্বতই মনে উদয় হইয়াছিল। সেই বিজন বন্যজন্তু-আধুষিত অরণ্য ও পর্বত অঞ্চলের নিবিড় সৌন্দর্য্য ও রহস্যের মধ্যে বসিয়া । অনেক দিন পরে কলিকাতায় ফিরিয়া একবার দেখিয়াছিলাম বড়বাজারে, জ্যৈষ্ঠ মাসের ভীষণ গরমের দিনে এক পশ্চিমা গাড়োয়ান বিপুল বোঝাই গাড়ীর মহিষ দুটাকে প্রাণপণে চামড়ার পাচন দিয়া নির্ম্মম ভাবে মারিতেছে--সেই দিন মনে হইয়াছিল, হায় দেব টাড়িবারো, এ ত ছোটনাগপুর কি মধ্যপ্রদেশের আরণ্যভূমি নয়, এখানে তোমার দয়ালু হস্ত এই নির্য্যাতিত পশুকে কি করিয়া রক্ষা করিবে ? এ বিংশ শতাব্দীর আধ্যসভ্যতাদৃপ্ত কলিকাতা। এখানে বিজিত আদিম রাজা দেবব্রু পান্নার মতই তুমি অসহায় । আমি নওয়াদা হইতে মোটর বাস ধরিয়া গয়ায় আসিব বলিয়া সন্ধ্যার পরেই রওনা হইলাম । বনোয়ারী আমাদের ঘোড়া লইয়া তাবুতে ফিরিল । আসিবার