পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sae আরণ্যক অন্ধকারে বনঝাউয়ের শীর্ষ দেখা যাইতেছে-দূরে কোথায় শিয়ালের দল প্রহর ঘোষণা করিল-আরও দূরে মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের সীমারেখা অন্ধকারে দীর্ঘকালো পাহাড়ের মত দেখাইতেছে- অন্য কোন শব্দ নাই কেবল একধরণের পতঙ্গের একঘেয়ে একটানা কি-বু বু-বু শব্দ ছাড়া, কান পাতিয়া ভাল করিয়া শুনিলে ঐ শব্দের সঙ্গে মিশানো আরও দু-তিনটি পতঙ্গের আওয়াজ শোনা যাইবে। কি অদ্ভুত রোমান্স এই মুক্ত জীবনে, প্রকৃতির সহিত ঘনিষ্ঠ নিবিড় পরিচয়ের সে কি আনন্দ ! সকলের উপর কি একটা অনিৰ্দেশ্য, অব্যক্ত রহস্য মাখানো-কি সে রহস্য জানি না-কিন্তু বেশ জানি সেখান হইতে চলিয়া আসিবার পরে আর কখনও সে রহস্যের ভাব মনে আসে নাই। যেন এই নিস্তব্ধ, নিৰ্জন রাত্রে দেবতারা নক্ষত্ররাজির মধ্যে সৃষ্টির কল্পনায় বিভোর, যে কল্পনায় দূর ভবিষ্যতে নব নব বিশ্বের আবির্ভাব, নব নব সৌন্দর্ঘ্যের জন্ম, নানা নব প্রাণের বিকাশ বীজৰূপে নিহিত। শুধু যে-আত্মা নিরলস অবকাশ ব্যাপন করে জ্ঞানের আকুল পিপাসায়, যার প্রাণ বিশ্বের বিরাটত্ব ও ক্ষুদ্রত্বের সম্বন্ধে সচেতন আনন্দে উল্লসিত-জন্মজন্মান্তরের পথ বাহিয়া দূর যাত্রার আশায় যার ক্ষুদ্র তুচ্ছ বর্ত্তমানের দুঃখ-শোক বিন্দুবৎ মিলাইয়া গিয়াছে-সে-ই তাদের সে রহস্যরূপ দেখিতে পায় । নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ••• এভারেস্ট শিখরে উঠিয়া যাহারা তুষারপ্রবাহে ও ঝঙ্কায় প্রাণ দিয়াছিল, তাহারা বিশ্বদেবতার এই বিরাট রূপকে প্রত্যক্ষ করিয়াছে’- ••কিংবা কলম্বাস যখন আজোরেস দ্বীপের উপকূলে দিনের পর দিন সমুদ্রবাহিত কাষ্ঠখণ্ডে মহাসমুদ্রপারের অজানা মহাদেশের বার্ত্তা জানিতে চাহিয়াছিলেন-তখন বিশ্বের এই লীলা শক্তি তঁর মনে ধরা দিয়াছিল-ঘরে বসিয়া তামাক টানিয়া প্রতিবেশীর কন্যার বিবাহ ও ধোপা-নাপিত বন্ধ করিয়া যাহারা আসিতেছে- তাহাদের কর্ম্ম নয়। ইহার স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম করা ।