পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Oe আরণ্যক মাঝে পালক উসকোথুসকো করিয়া ঝুলাইয়া বৃষ্টির জল আটকাইবার চেষ্টা করে, কখনও এমনিই বসিয়া থাকে। এমন দিনে আপিস-ঘরে বসিয়া দিন কাটানো আমার পক্ষে কিন্তু অসম্ভব হইয়া উঠিত । ঘোড়ায় জিন কসিয়া বর্ষাতি চাপাইয়া বাহির হইয়া পড়িতাম--- সে কি মুক্তি ! কি উদ্দাম জীবনানন্দ । আর কি অপরূপ সবুজের সমুদ্র চারিদিকে -বর্ষার জলে নবীন, সতেজ ঘন সবুজ কাশের বন গজাইয়া উঠিয়াছে’- যত দূর দৃষ্টি চলে, এদিকে নাঢ়া বাইহারের সীমানা। ওদিকে মোহনপুরা অরণ্যের অস্পষ্ট নীল সীমারেখা পর্য্যন্ত বিস্তৃত থৈ থৈ করিতেছে এই সবুজের সমুদ্র-বর্ষাসজল। হাওয়ায় মেঘকাজল আকাশের নীচে এই দীর্ঘ মকরতিশ্যাম তৃণভূমির মাথায় ঢেউ খেলিয়া যাইতেছে- আমি যেন একা এ অকুল সমুদ্রের নাবিক।-কোন রহস্যময় স্বপ্ন-বন্দরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়াছি । এই বিস্তৃত মেঘছায়াশ্যামল মুক্ত তৃণভূমির মধ্যে ঘোড়া ছুটাইয়া মাইলের পর মাইল যাইতাম-কখনও সরস্বতীকুণ্ডীর বনের মধ্যে ঢুকিয়া দেখিয়াছি-প্রকৃতির এই অপূর্ব্ব নিভৃত সৌন্দর্য্যভূমি যুগলপ্রসাদের স্বহস্তে রোপিত নানা-জাতীয় বন্য ফুলে ও লতায় সজ্জিত হইয়া আরও সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে। সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে সরস্বতী হ্রদ ও তাহার তীরবত্তী বনানীর মত সৌন্দর্য্যভূমি খুব বেশী নাইএ নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। হ্রদের ধারে রেড ক্যাম্পিয়নের মেলা বসিয়াছে এই বর্ষাকালে-হ্রদের জলের ধারের নিকট । জলজ ওয়াটারক্রোফুটের বড় বড় নীলাভ সাদা ফুলে ভরিয়া আছে। যুগলপ্রসাদ সেদিনও কি একটা বন্যলতা আনিয়া লাগাইয়া গিয়াছে জানি। সে আজমাবাদ কাছারিতে মুহুরীর কাজ করে বটে, কিন্তু তাহার মন পড়িয়া থাকে সরস্বতী কুণ্ডীর তীরবত্তী লতাবিতানে ও বন্যপুষ্পের কুঞ্জে । সরস্বতী কুণ্ডীয় বন হইতে বাহির হইতাম-আবার মুক্ত প্রান্তর, আবার দীর্ঘ তৃণভূমি-বনের মাথায় ঘন নীল বর্ষার মেঘ আসিয়া জমিতেছে, সমগ্র জলভার নামাইয়া রিক্ত হইবার পূর্বেই আবার উড়িয়া আসিতেছে নবমেঘপুঞ্জ-একদিকের