পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዓመ আরণ্যক গিরধারীলাল এরই মধ্যে স্থাপাইয়া পড়িয়াছিল। একটু দাম লইয়া বলিলপূর্ণিয়ায় হাসপাতালে যাচ্ছিলাম হুজুর-নইলে ঘা তো সারে না। আশ্চর্য্য না হইয়া পারিলাম না । মানুষের কি আগ্রহ বাচিবার ! গিরধারীলাল যেখানে থাকে, পূর্ণিয়া সেখান হইতে চল্লিশ মাইলের কম নয়-মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের মত শ্বাপদসঙ্কুল আরণ্যভূমি সামনে-ক্ষতে অবশ হাত-পা লইয়া সে চলিয়াছে এইদুর্গম পাহাড়-জঙ্গলের পথ ভাঙিয়া পূর্ণিয়ার হাসপাতালে! * চারপাই আসিল। সিপাহীদের বাসার কাছে একটা খালি ঘরে উহাকে লাইট্ৰা গিয়া শোওয়াইয়া দিলাম। সিপাহীরাও কুণ্ঠ বলিয়া একটু আপত্তি তুলিয়াছিল, পরে বুঝাইয়া দিতে তাহারা বুঝিল । গিরধারীকে খুব ক্ষুধার্ত্ত বলিয়া মনে হইল। অনেকদিন সে যেন পেট ভরিয়া থাইতে পায় নাই। কিছু গরম দুধ খাওয়াইয়া দিতে সে কথঞ্চিৎ সুস্থ হইল। সন্ধ্যার দিকে তাহার ঘরে গিয়া দেখি সে অঘোরে ঘুমাইতেছে। পরদিন স্থানীয় বিশিষ্ট চিকিৎসক রাজু পাড়েকে ডাকাইলাম। রাজু গম্ভীর মুখে অনেকক্ষণ ধরিয়া রোগীর নাড়ী দেখিল, ঘা দেখিল। রাজুকে বলিলামদেখ, তোমার দ্বারা হবে, না পূর্ণিয়ায় পাঠিয়ে দেব ? রাজু আহত অভিমানের সুরে বলিল-আপনার বাপ-মায়ের আশীর্ব্বাদে হুজুর, অনেক দিন এই কাজ করছি। পািনর দিনের মধ্যে ঘা ভাল হয়ে যাবে। গিরধারীকে হাসপাতালে পাঠাইয়া দিলেই ভাল করিতাম, পরে বুঝিলাম। ঘায়ের জন্য নহে, রাজু পাড়ের জড়ি-বুটির গুণে পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যেই ঘায়ের চেহারা বদলাইয়া গেল-কিন্তু মুশকিল বাধিল তাহার সেবাশুশ্রুষা লইয়া। তাহাকে কেহ ছুইতে চায় না, ঘায়ে ঔষধ লাগাইয়া দিতে চায় না, তাহার খাওয়া জলের ঘাঁটিটা পর্য্যন্ত মাজিতে আপত্তি করে। তাহার উপর বেচারীর হইল জার। খুব বেশী জর । নিরুপায় হইয়া কুস্তাকে ডাকাইলাম। তাহাকে বলিলাম--তুমি বন্তি থেকে একজন গাঙ্গোতার মেয়ে ডেকে দাও, পয়সা দেব-ওকে দেখাশুনো করতে হবে।