পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

 - আমরা গয়া জেলায় বাস করি।

 - ভারতবর্ষের নাম শুনেছ?

 ভানুমতী মাথা নাড়িয়া জানাইল সে শোনে নাই। কখনো কোথায় যায় নাই চক্‌মকিটোলা ছাড়িয়া। ভারতবর্ষ কোন্‌দিকে?

 একটু পরে বলিল- আমার জ্যাঠামশায় একটা মহিষ এনেছিলেন, সেটা এবেলা তিন সের, ওবেলা তিন সের দুধ দিত। তখন আমাদের এর চেয়ে ভালো অবস্থা ছিল বাবুজী, তখন যদি আপনি আসতেন, আপনাকে রোজ খোয়া খাওয়াতাম। জ্যাঠামশায় নিজের হাতে খোয়া তৈরি করতেন। কি মিষ্টি খোয়া! এখন তেমন দুধই হয় না তার খোয়া। তখন আমাদের খাতিরও ছিল খুব।

 পরে হাতখানি একবার তুলিয়া চারিদিকে ঘুরাইয়া গর্বের সহিত বলিল- জানেন বাবুজী, এই সমস্ত দেশ আমাদের রাজ্য ছিল! সারা পৃথিবীটা। বনে যে গোঁড় দেখেন, সাঁওতাল দেখেন ওরা আমাদের জাত নয়। আমরা রাজগোঁড়। আমাদের প্রজা ওরা, আমাদের রাজা বলে মানে।

 উহার কথায় দুঃখও হইল, হাসিও পাইল। মহাজনে দেনার দায়ে দুইবেলা যাহাদের মহিষ ধরিয়া লইয়া যায়, সেও রাজবংশের গর্ব করিতে ছাড়ে না।

 বলিলাম- আমি জানি ভানুমতী তোমাদের কত বড় বংশ-

 ভানুমতী বলিল- তারপর শুনুন বাবুজী, আমাদের সেই মহিষটা বাঘে নিয়ে গেল। জ্যাঠামশায় যে মহিষটা এনেছিলেন।

 - কি করে?

 - জ্যাঠামশায় ওই পাহাড়ের নিচে চরাতে নিয়ে গিয়ে একটা গাছতলায় বসে ছিলেন, সেখানে বাঘে ধরল।

 বলিলাম- তুমি বাঘ দেখেছ কখনো?

 ভানুমতী কালো জোড়া-ভুরু দুটি আশ্চর্য হইবার ভঙ্গিতে উপরের দিকে তুলিয়া বলিল- বাঘ দেখি নি বাবুজী! শীতকালে আস্‌বেন চক্‌মকিটোলায়-বাড়ির উঠোন থেকে গোরু বাছুর ধরে নিয়ে যায় বাঘে-