আমায় আশীর্বাদ করিল। রাজু বলিল- হুজুর, আপনি চলে গেলে লবটুলিয়া উদাস হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গক্রমে বলি এদেশে ‘উদাস’ শব্দের ব্যবহার এবং উহার অর্থের ব্যাপকতা অত্যন্ত বেশি। মকাই-ভাজা খাইতে খারাপ লাগিলে বলে, ‘ভাজা উদাস লাগছে।’ আমার সম্পর্কে কি অর্থে উহা ব্যবহৃত হইল ঠিক বলিতে পারিব না।
আমার বিদায় লইয়া আসিবার সময় একটি মেয়ে কাঁদিয়াছিল। আজ সকাল হইতে আসিয়া সে কাছারির উঠানে দাঁড়াইয়া ছিল- আমার পালকি যখন তোলা হইল, তখন চাহিয়া দেখি সে হাপুস-নয়নে কাঁদিতেছে। মেয়েটি কুন্তা।
নিরাশ্রয়া কুন্তাকে জমি দিয়া বসবাস করাইয়াছি, আমার ম্যানেজারি জীবনের ইহা একটি সৎকাজ। পারিলাম না কিছু করিতে সেই বালিকা মঞ্চীর। অভাগিনীকে কে কোথায় যে ভুলাইয়া লইয়া গেল! – আজ সে যদি থাকিত তাহার নিজের নামে জমি দিতাম বিনা সেলামিতে।
নাঢ়া-বইহারের সীমানায় নক্ছেদীর ঘর দেখিয়াই আরো কথা মনে পড়িল। সুরতিয়া ঘরের বাহিরে কি করিতেছিল, আমার পালকি দেখিয়াই বলিয়া উঠিল-বাবুজী, বাবুজী, একটু রাখুন-
পরে সে ছুটিয়া আসিয়া পালকির কাছে দাঁড়াইল। ছনিয়াও আসিল পিছু-পিছু।
- বাবুজী, কোথায় যাচ্ছেন?
- ভাগলপুরে। তোর বাবা কোথায়?
- ঝল্লুটোলায় গমের বীজ আনতে গিয়েছে। কবে আসবেন?
- আর আসব না।
- ইস! মিথ্যে কথা! …