পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফেলিয়া ছাড়িবে না। তাহার গায়ে একটা জামা ছিল, কিন্তু আজ অসহ্য পিপাসায় দুপুরের পরে এমন গা-জ্বলুনি শুরু হইয়াছিল যে, জামাটা খুলিয়া কোথায় ফেলিয়া দিয়াছে। এ অবস্থায় দৈবক্রমে আমাদের কাছারির হনুমানের ধ্বজার লাল নিশানটা দূর হইতে তাহার চোখে না পড়িলে লোকটা আজ বেঘোরে মারা পড়িত।

 একদিন এই ঘোর উত্তাপ ও জলকষ্টের দিনে ঠিক দুপুরবেলা সংবাদ পাইলাম, নৈর্ঋত কোণে মাইলখানেক দূরে জঙ্গলে ভয়ানক আগুন লাগিয়াছে এবং আগুন কাছারির দিকে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। সবাই মিলিয়া তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া দেখিলাম প্রচুর ধূমের সঙ্গে রাঙা অগ্নিশিখা লক্‌লক্ করিয়া বহুদূর আকাশে উঠিতেছে! সেদিন আবার দারুণ পশ্চিমে বাতাস, লম্বা লম্বা ঘাস ও বনঝাউয়ের জঙ্গল সূর্যতাপে অর্ধশুষ্ক হইয়া বারুদের মতো হইয়া আছে, এক-এক স্ফুলিঙ্গ পড়িবামাত্র গোটা ঝাড় জলিয়া উঠিতেছে- সেদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় ঘন নীলবর্ণ ধূমরাশি ও অগ্নিশিখা- আর চটচট শব্দ। ঝড়ের মুখে পশ্চিম হইতে পূর্ব দিকে বাঁকা আগুনের শিখা ঠিক যেন ডাকগাড়ির বেগে ছুটিয়া আসিতেছে আমাদের কয়খানা খড়ের বাংলোর দিকেই। সকলেরই মুখ শুকাইয়া গেল, এখানে থাকিলে আপাতত তো বেড়া-আগুনে ঝলসাইয়া মরিতে হয়- দাবানল তো আসিয়া পড়িল!

 ভাবিবার সময় নাই। কাছারির দরকারি কাগজপত্র, তহবিলের টাকা, সরকারি দলিল, ম্যাপ, সর্বস্ব মজুত- এ বাদে আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিস যার যার তো আছেই। এ সব তো যায়! সিপাহীরা শুষ্কমুখে ভীতকণ্ঠে বলিল- আগ তো আ গৈল, হুজুর! বলিলাম – সব জিনিস বার কর। সরকারি তহবিল ও কাগজপত্র আগে।

 জনকতক লোক লাগিয়া গেল আগুন ও কাছারির মধ্যে যে জঙ্গল পড়ে তাহারই যতটা পারা যায় কাটিয়া পরিষ্কার করিতে। জঙ্গলের মধ্যে বাথান হইতে আগুন দেখিয়া বাথানওয়ালা চরির প্রজা দু-দশ জন ছুটিয়া আসিল