পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (চতুর্থ বর্ষ).pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় ১৩২ ৷ প্রতাপাদিত্যের গৃহদেবতা। ২৫৫ ঐ পরগণাগুলির জমীদারী-সনন্দসহ ‘মজুমদার’ উপাধি প্রদান করিয়া । জানকীবল্লভকে সম্মানিত করেন। জমীদারী প্রাপ্ত হইয়া জানকীবল্লভ মূলঘরে বাসস্থাননির্ম্মাণ করিয়া পরগণা শাসন ও সংরক্ষণ করিতে লাগিলেন। ইহার পর দিল্লীর সম্রাটের সহিত যশোহর শ্বরের যখন সংঘর্ষ উপস্থিত হইল তখন তৎকালীন প্রথানুসারে মহারাজ অধীনস্থ জমীদারদিগের নিকট রসদ, সৈন্য ও নৌকা চাহিয়া পাঠাইলেন। রাজাদেশে জানকীবল্লভও নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য নৌকা ও রসদ লইয়া স্বয়ং যশোহরে উপস্থিত হইলেন। জানকীবল্লভ কেবল যে নৌকা, সৈন্য ও রসদ যোগাইয়া নিশ্চিন্ত ছিলেন তাহা নহে। মোগল সেনাপতি মানসিংহের সহিত শেষ যুদ্ধের সময় তিনি স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়া প্রতাপাদিত্যের পক্ষে থাকিয়া যুদ্ধ করিয়াছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না। প্রতাপাদিত্য যুদ্ধে পরাজিত হইয়া বন্দী হইলেন, আর বিজয়ী মোগল বাহিনী ‘আল্লা-হো-আকবর’ রূবে দিক্‌ প্রাকম্পিত করিয়া রাজপুৱীতে প্রবেশোদ্যত হইল। জানকীবল্লভ দেখিলেন, রাজা গিয়াছেন ; এখন বুঝি রাজার গৃহ-দেবতাও মুসলমান হস্তে বিধ্বস্ত ও লাঞ্ছিত হয়েন । তাই তিনি অতি দ্রুত দেবালয়ে প্রবেশ করিয়া প্রতাপাদিত্যের প্রতিষ্ঠিত “লক্ষ্মীনারায়ণ’ ও ‘রাজরাজেশ্বর’ ‘চক্র’ নামক শালগ্রামশিলা দুইটি আনিয়া একেবারে স্বীয় বাসভূমি মূলঘরে প্রস্থান করিলেন। জানকীবল্পত বিগ্রহদ্বয়কে তথায় রীতিমত প্রতিষ্ঠিত করিয়া সেবার ও পূজার ব্যয় । নির্বাহজন্য স্বীয় জমীদারী হইতে কতকটা জমী দেবোত্তর করিয়া দেন। ইহার পরে জানকীবল্লাভের মৃত্যু হইলে তাহার বংশধরগণমধ্যে যখন সম্পত্তি বিভক্ত হইয়া যায়। তখন স্থাবর সম্পত্তির ন্যায় গৃহদেবতাদ্বয়ও বিভক্ত হইয়া৷ “লক্ষ্মী নারায়ণ’ ‘দশ অনী’ অংশের ও ‘রাজরাজেশ্বর’ ‘ছিয়া আনী’ ংশের হস্তে আইসেন। কিছু দিন পরে ছয় আনী অংশের প্রধান শাখা মূলঘর হইতে উঠিয়া গিয়া ফরিদপুর জিলার কাজুলিয়া গ্রামে উপনিবিষ্ট হয়েন। মূলঘর হইতে যাইবার সময় ইহার ‘রাজরাজেশ্বরকে’ লইয়া গিয়াছিলেন। সেই হইতেই ‘রাজরাজেশ্বর’ কাজুলিয়া গ্রামে বাস করিাতেছেন। ‘লক্ষ্মীনারায়ণ’ এখনও মূলঘর গ্রামে থাকিয়া দশ আনী শাখার সরিকগণ কর্তৃক পালাক্রমে পূজিত হইতেছেন। জানকীবল্লাভের বংশধরগণ এখন বিত্তচু্যুত হইয়াছেন বটে ; কিন্তু এখনও তাহারা সেই দেবোত্তরের উপস্বত্বে অতি ভক্তির সহিতই বিগ্রহন্বয়ের সেবা পূজা চালাইয়া আসিতেছেন।