পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (তৃতীয় বর্ষ - দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

roo আর্য্যাবর্ত্ত । ৩য় বর্ষ-১২শ সংখ্যা । পরিবার, তাহারা সংখ্যায় এখন আটটিী ; তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে হইবে ভাবিয়া মনে বড়ই ক্লেশ হইতে লাগিল। তাহারা কিছুমাত্র বুঝিতে পারে নাই যে, এতদিন যে ব্যক্তি তাহদের আশ্রয় ও প্রতিপালক ছিল, সে আজ হঠাৎ তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইবে। আব্দুরী আমার বড়ই আদরের ছিল । রাত্রিতে আমি কখনও কখনও আহারের পূর্বে ঘুমাইয়া পড়িতাম, আব্দুরী সম্মুখের দুইটী পা আমার খাটের উপর তুলিয়া দিয়া আমাকে ঠেলিয়া জাগাইত, কিন্তু আমার গায়ে নখর লাগিত না ; মকমলের ন্যায় কোমল ক্ষুদ্র পায়ের মৃদু আঘাতে আমি জাগিয়া দেখিতাম, আব্দুরী আমাকে ঠেলিতেছে, অমনি আমি বুঝিতাম যে, ৯টা বাজিয়াছে, আমার রাত্রির আহারের সময় হইয়াছে । আহারের পর বিড়াল-পরিবার প্রসাদ পাইবে, তাই আমাকে জাগাইতেছে। আব্দুরীর অনেক কথা এখনও মনে পড়িতেছে,তাহার প্রাতা ভগিনীদিগের প্রতি তাহার যে অতুল অনুরাগ ও নিঃস্বার্থ ভালবাসা দেখিয়াছি, মনুষ্যের মধ্যেও সেরূপ বিরল । * * * সে আপনি সন্তানগণকে স্ত% পান করাইতেছে, এমন সময়ে অদূরে ভাই-বোন কেই কোনও কারণে কাদিলে আপনি সন্তান ছাড়িয়া দৌড়াইয়া গিয়া তাহাকে স্তন্যপান করাইত। অনেক সময়ই দেখা যাইত, সে অ্যাপন তিনটী সস্তান ও তিনটী ভাই-বোনকে এক সঙ্গে স্তন্যদান করিতেছে ; ইহাতে তাহার শরীর অত্যন্ত খারাপ হইয়া গিয়াছিল । আমি অনেক সময় উহার ভাই-বোনকে স্তন্যদানে বাধা দিয়াছি ; কেন না, তাহারা তখন বড় হইয়াছে, কিন্তু আব্দুরী গোপনে তাঙ্গাদিগকে স্তন্যপান করাইত । একদিন একটি ভগিনীকে পাওয়া গেল না, তজ্জন্ত আহুরী সমস্ত রাত্রি রোদন করিয়াছিল। আজ এই বিড়াল-পরিবারকে ছাড়িয়া যাইব ভাবিয়া আমি হৃদয়ে বড়ই ব্যথা পাইলাম।” মনোরঞ্জন বাবু যেরূপভাবে বিড়াল-পরিবারের বিশেষত্ব লক্ষ্য করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, সেরূপ ভাব বাঙ্গালা সাহিত্যে এক সঞ্জীবচন্দ্রের রচনা ব্যতীত আর কোথাও দেখিয়াছি, মনে হয় না । গ্রন্থখানির ভাষা যেমন মধুর, ভাব তেমনই নির্ম্মল। আর গ্রন্থে নানা রূপ বর্ণনা এমনই সরস যে পুস্তকখানি পাঠ করিতে আরম্ভ করিলে শেষ না করিয়া উঠা যায় না । গ্রন্থে গ্রন্থকারের সদানন্দ হৃদয়ের পরিচয় সর্ব্বত্র সপ্রকাশ । *