পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (তৃতীয় বর্ষ - প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ ৷৷ অদৃষ্ট-চক্র । SSV) একটি সাপ্তাহিক বৈঠক বসিত। অধিবেশন প্রায়ই অমূল্যচরণের গৃহে হইত। যতীশচন্দ্র সে বৈঠকের একজন অতি উৎসাহী সভ্য ছিল। সে প্রায়ই বৈঠকে প্রবন্ধ পাঠ করিত। সে সকল প্রবন্ধ অমূল্যচরণের মাসিক পত্রে প্রকাশিত হইত। প্রতি রবিবারে বৈঠক বসিত। পিতা গৃহে থাকায় যতীশচন্দ্র মধ্যে মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত হইতে পারিত না । কিন্তু রবিবার আসিলেই সে তাহার পল্লীগৃহ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় বন্ধু সমাজে যাইতে ব্যাকুল হইত। সে যে যশের মরীচিকায় প্রসুব্ধ হইয়াছিল। তাহা সে জনারণ্য কলিকাতায় সহজপ্রাপ্য মনে করিয়াছিল । তাই সে রবিবারে যখন আপনার পল্পীভবনে ক্ষুদ্র কক্ষে পালঙ্কে শয়ন করিয়া বাহিরে মধ্যাহ্নরবিকরতপ্ত প্রকৃতির মলিন মুখ দর্শন করিত-দেখিত, তাম্রাভ আকাশে মেঘ নাই— বহু উচ্চে শব্যান্বেষী শকুনির চক্রাকারে উড়িতেছে, আর চাতক কাতর। কণ্ঠে জল ভিক্ষা করিতেছে ; আর শুনিত, নিয়ে বৃক্ষশাখায় মলিনশ্রী পল্লবের অন্তরালে আসীন ঘুঘুর কাতর স্বর ভাসিয়া আসিতেছে—তখন সে কর্ম্মকোলাহলকলয়িত ধূলিধূসর কলিকাতার স্বপ্ন দেখিত। সে কল্পনানেত্রে কলিকাতার পরিচিত ব্যস্ততা লক্ষ্য করিত-কলিকাতার ধূলি-কলিকাতার আবর্জনা-কলিকাতার দুৰ্গন্ধ যেন সে অনুভব করিত। সে ভাবিত, সেই কর্ম্মস্রোতে সে তরী ভাসাইয়াছে--সেই তরী তাহাকে তাহার উদ্দিষ্ট যশোমন্দিরে লইয়া যাইবে । তাহার পর সে বন্ধুদিগের, বিশেষ অমূল্যচরণের, পত্র পাইত— “তাবিত অলি গুঞ্জরে যাই ফুল ধুতুরারে যাবত ফুল মালতী নাহি ফুটে ৷” বন্ধুরা তাহার অনুপস্থিতিহেতু তাহাকে বিদ্রুপ করিয়া পত্র লিখিত । সে বিক্রপশাণিত ; তাহার আঘাত উপভোগযোগ্য। বিশেষ অমূল্যচরণের পত্র সর্বদাই সরস। অমূল্যচরণের ক্ষমতা দীর্ঘ বা সারবান রচনার উপযোগী “ছিল না। কিন্তু ‘স্কুদ্র রচনায়-পত্রলিখনে তাঁহার বিশেষ দক্ষতা ছিল। সে কথোপকথনে যেমন ক্ষুদ্র রচনাতেও তেমনই সহজে রসসঞ্চার করিতে পারিত-সেসকল রচনা বিদ্রপপরিহাসে সমুজ্জ্বল হইত। অমূল্যচরণের এই সকল পত্র যতীশকে চঞ্চল করিয়া তুলিত। বিশেষ তাহার তরুণ হৃদয়ে অমূল্যচরণের যে প্রভাব পতিত হইয়াছিল তাহা দূর হয় নাই।