পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (তৃতীয় বর্ষ - প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RR আর্যাবস্তু। : ৩য় বর্ষ- ১ম সংখ্যা । চিন্তার ছায়াপাত হইয়াহিল-আজ যেন তাহা একটু নিবিড় হইয়া উঠিল। বিবাহ-সভায় বরাসনে আসীন বরকে দেখিয়া বিরজার মনে হইয়াছিলসে পূর্বে যতীশকে দেখিয়াছে। কোথায় দেখিয়াছে-কবে দেখিয়াছে-সে কিছুতেই মনে করিতে পারিতেছিল না। স্থতি যখন সহসা আমাদের সঙ্গে এইরূপ লুকাচুরী খেলে তখন একটা অব্যক্ত চাঞ্চল্যে মন ব্যথিত হয়। বিরাজার যখন তাহাই হইতেছিল তখন সহসা মেঘান্ধকার নিশায় বিদু্যদ্বিকাশে প্রকৃতির মূর্ত্তি যেমন মুহূর্তে সুস্পষ্ট দেখা যায় অমূল্যচরণকে দেখিয়া তেমনই তাহার স্মৃতিতে পূর্বকথা সুস্পষ্ট ফুটিয়া উঠিল। তাহার মনে পড়িল, এক দিন ভদ্রের অপরাহ্নে নৌকা-যাত্রী একদল যুবকের দৃষ্টি অতিক্রম করিবার জন্য সে ঘাট হইতে দ্রুতপদে গৃহে ফিরিয়া আসিয়াছিল। যতীশচন্দ্র সেই দলে ছিল-অমূল্যচরণও ছিল, অমূল্যচরণ নিলাজ নিঃসঙ্কোচে দূরবীক্ষণ দিয়া স্বানের ঘাটে কুলাঙ্গনাদিগকে দেখিতেছিল। সেই কুলাঙ্গারকে দেখিয়া সে দিন বিরাজা ভাবিয়াছিল-ইহাদিগকে আপনার অন্ধকার অতল তলে লইয়া পুণ্যতোয়া ভাগীরথী পৃথিবীর পাপভার লাঘব করেন না কেন ? আজি তাহাকে দেখিয়া ঘূণায়-লাজায়-ক্রোধে তাহার হৃদয় চঞ্চল হইয়া উঠিল। কিন্তু মুহুর্ত্তমধ্যে সে চাঞ্চল্য দূর হইয়া গেল-দারুণ আশঙ্কায় তাহার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। যাহার করে তাহার মাতৃহীনা ভগিনীর কর অর্পিত হুইবে-সে ত ইহারই বন্ধু ! ইহাই কি তাহার মেহের পুত্তল সরোজার ললাট-লিখন ? তাহার ইচ্ছা হইল, সে তখনই যাইয়া পিতাকে সকল কথা বলে। কিন্তু সে সহজেই বুবিল, এখন বিবাহ-সভায় বর উপস্থিত; এখন বাগদত্তা ভগিনীর বিবাহ ভঙ্গ করা অসম্ভব। সে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিল। বিরাজ আর ভগিনীর বিবাহের উৎসবে অবারিত আনন্দ উপভোগ করিতে পারিল না, তাহার হৃদয়ে দারুণ দুশ্চিন্তা। । সেই দুশ্চিন্তা লইয়া বিরজা এ কয় দিন কাটাইয়াছে। ব্রজেন্দ্রকে এ কথা বলিয়া সে তাহার মতামত জানিবার জন্য ব্যস্ত। ব্রজেন্দ্রের মতামতে কি হইবে তাহা সে জানে না ; কিন্তু সে তাহাতে এ কথা না জানাইতে পারিলে তাহার হৃদয়ের ভার , কমিতেছে না। যখন হৃদয়ের বেদনাভার নিতান্তই । দুৰ্বহ হইয়া উঠে তখন মানুষ, যেন সহজাত সংস্কারবশে, জ্বাগদাতীত কোন মহাশক্তিকে সে বেদনার কথা জানাইতে প্রবৃত্ত হয়-দেবতার চরণে আপনার বেদন জানাইয়াই সে শান্তি ও সাত্বনা লাভ করে। বিরজা তেমনই