পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (দ্বিতীয় বর্ষ - দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ህ¢ é আর্য্যাবর্ত ২য় বর্ষ-৯ম সংখ্যা । হইত। দিব্যগন্ধে তখন তাহার ঘর পরিপূর্ণ হইয়া যাইত। দূর হইতে বাঁশী মোহন স্বরে বাজিয়া বাজিয়া নিকটে আসিত। যমুনার উচ্ছলিত কলগীতি সমীরণের অলস পক্ষে ভাসিয়া আসিত। নূপুরের মধুরধ্বনি স্পষ্ট হইতে স্পষ্টতর হইয়া তাহার কর্ণে অমৃতের ধারা বর্ষণ করিত। আর তাহার বাহুলতানিবদ্ধ কৃষ্ণমুক্তি দেখিতে দেখিতে সে ঘুমাইয়া পড়িত। এমনই মধুর স্বপ্নে তাহার রজনী পোহাইত । প্রভাতে সে দেখিত, শয্যাপার্থে অলক্তকচিহ্ন, আর তাহার বক্ষ কুস্কুমারাগরঞ্জিত ! গোপালের বঁাশী চুরি হইবার পরে দুই একদিনের মধ্যেই রাজার লোক প্রধান পুরোহিতের দ্বারদেশে আসিয়া দেখা দিল। প্রত্যুষে ব্রাহ্মণ মঙ্গল ধূপের আরতি সমাপন করিয়া গৃহে আসিয়া দেখেন, তঁহার প্রাঙ্গণে সশস্ত্র রাজভৃত্যগণ কোলাহল করিতেছে। তঁহার গৃহ অনুসন্ধান করিবে। শ্রীমতী তখনও স্বপ্নের স্মৃতি বক্ষে ধরিয়া নিবিড় নিদায় নিমগ্ন ছিল। প্রতিবেশীরা ক্রমে আসিয়া উপস্থিত হইল। ব্রাহ্মণ অবিচলিত, ধীর কিন্তু গৃহানুসন্ধানের গ্লানি-নিবন্ধন धिझमान । কিছুক্ষণ পরে শ্রীমতী উঠিয়া আসিয়া গবাক্ষে দর্শন দিল, প্রাঙ্গণের কোলাহল অকস্মাৎ থামিয়া গেল। গত রজনীর স্বৰ্গীয় সুখস্মৃতি তাহার মুখকমলে এমন একটি স্নিগ্ধ উজ্জ্বলতার চিহ্ন রাখিয়া গিয়াছে যে, তাহার নিকট সমস্ত সংশয় সন্দেহ তর্কজাল ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। কিছুক্ষণ বিস্ময়ে নিৰ্বাক থাকিয়া কর্ম্মচারী প্রহারিগণকে গৃহে প্রবেশ করিবার অনুমতি দিলেন। ব্রাহ্মণ কন্যাকে বক্ষে লইয়া প্রাঙ্গণপাশ্বে তামালের নিম্নে আসিয়া দাড়াইলেন । শ্রীমতী পিতাকে সযত্নে ধরিয়া বসাইয়া দিল । তাহার দেহব্যষ্টি অভিমানভারে কঁাপিতেছিল। অকস্মাৎ শ্রীমতীর শয়ন-কক্ষে প্রহরীরা জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল। ব্রাহ্মণ ভ্র কুঞ্চিত করিয়া একবার শ্রীমতীর দিকে চাহিলেন ও পরীক্ষণেই উঠিয়া দাড়াইলেন। রাজকর্ম্মচারী ব্রাহ্মণকে সংবাদ দিলেন যে, তঁহার কন্যার উপাধানের নিয়ে বাশী পাওয়া গিয়াছে। তঁহার অনুচররা বাঁশী লইয়া আসিল । গোপালের বঁাশী পাওয়া গিয়াছে, এই উল্লাসে ব্রাহ্মণ বঁাশী লইবার জন্য হাত বাড়াইয়া দিলেন ; তিনি ভুলিয়া গিয়াছিলেন যে, এই বঁাশী অব্যক্ত স্বরে তঁহারই কলঙ্ক ঘোষণা করিতেছে। কর্ম্মচারী কঠোর হন্তে প্রহরীর নিকট হইতে বাশী লাইলেন এবং কর্কশ স্বরে পুরোহিতকে বলিলেন, “আপনি বৃদ্ধ আপনাকে বন্ধন করিব না, আমাদের সঙ্গে চলুন।”