পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (প্রথম বর্ষ).pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদুষী। অপরাহ্নে আফিস হইতে ফিরিয়া ব্রজেন্দু আয়নার সম্মুখে দাড়াইয়া কোটের বোতাম খুলিতেছে এমন সময় দর্পণে পশ্চাতে দ্বারপথে প্রবেশমানা পত্নীর প্রতিবিম্ব দেখিয়া সে ঘুরিয়া দাড়াইল । ততক্ষণে রমা স্বামীর নিকটে আসিয়াছে। রমা। ষোড়শী-তাহার রূপসম্পদসম্পন্ন দেহে যৌবনের লাবণ্য ঢল ঢলা করিতেছে ; যেন ভদ্রের ভরা নদীতে জুয়ার আসিয়াছে। তাহার অবগুণ্ঠন সরিয়া আসিয়া কালাপেড়ে কাপড়ের পাড় কবরীতে বাধিয়া ছিল ; দুই কর্ণে দুইখানি কীরক জলিতেছিল। ব্রজেন্দু যেন অত্যন্ত ভক্তি দেখাইয়া স্ত্রীকে নমস্কার করিল। রমা যেন অত্যন্ত রাগ দেখাইয়া বলিল, “অমন করিলে আমি আর আসিব না।” স্বামী যুবকস্ত্রী ষোড়শী ; সুতরাং প্রথম পক্ষের ভক্তি ও দ্বিতীয় পক্ষের রাগ কোনটাই যে প্রকৃত নহে, পরন্তু যৌবনসুলভ রহস্তপ্রিয়তার পরিচায়ক তাহ বলাই বাহুল্য। ব্রজেন্দু বলিল, “রাগ করিলে চলিবে কেন ? তোমাদিগের সম্মান না করিলে গৃহস্থের মঙ্গল নাই। মহর্ষি মনু বলিয়াছেন ;- “যত্র নার্য্যস্ত পুজ্যন্তে রামন্তে তত্র দেবতাঃ । যজ্ঞৈতাস্তু ন পুজ্যন্তে সর্ব্বাস্তাত্রাফলঃ ক্রিয়াঃ ॥” অর্থাৎ, যে কুলে নারীগণের সম্যক সমাদর আছে, তথায় দেবতারা প্রসন্ন আছেন ; আর যে পরিবারে তঁহাদিগের পুজা নাই সে পরিবারের ক্রিয়াকর্ম্ম সবই বৃথা।” । রামা বলিল, “মনু বুঝি নারী অর্থে পত্নীর পূজার কথাই বলিয়াছেন ?” ব্রজেন্দু বলিল, “নিশ্চয় । মনু বলেন, গৃহে শ্রীতে ও স্ত্রীতে-অর্থাৎ লক্ষ্মীতে ও পত্নীতে প্রভেদ নাই।” রামার নয়নে যেন ৰিদ্যুৎ চমকাইয়া গেল। সে বলিল, “তুমি বুঝি “মিনুসংহিতায়” আর কোন শ্লোক পাইলে না ? কেন মনুই ত বলিয়াছেন ;- "নাস্তি স্ত্রীণাং পৃথগযজ্ঞোন ব্রতং নাপুপোষিতম। পতিং শুশ্রয়তে যেন তেন স্বৰ্গে মহীয়তে ॥” অর্থাৎ, নারীদিগের স্বামী ভিন্ন পৃথক যজ্ঞ, ব্রত ও উপবাস নাই ; কেবল পতিসেবায় তাহারা স্বৰ্গে গমন করে।”