পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (প্রথম বর্ষ).pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরলোকগত চন্দ্রনাথ বসু।* অল্পদিনের মধ্যে মৃত্যু বঙ্গসাহিত্যের যে ক্ষতি করিয়াছে, তেমন ক্ষতি বোধ হয়। বহুদিন হয় নাই। মৃত্যুর নিবিড় ছায়া ধীরে ধীরে প্রসারিত হইয়া বঙ্গসাহিত্যসংসার অন্ধকার করিয়া ফেলিয়াছে। রৈবতক,’ ‘কুরুক্ষেত্র, ও ‘প্রভাসের’ নবীন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন নবীনচন্দ্র, বঙ্গভাষার অকৃত্রিম ভক্ত শ্রীশচন্দ্র, ভারতের অতীত গৌরবের সাক্ষিীস্বরূপ রমেশচন্দ্র—একে একে অস্তমিত হইয়াছেন। হিন্দুত্বের গৌরব মস্তকে লইয়া, বঙ্গবাসীর জাতীয় চরিত্রের মহামহিমময় আদর্শ ফুটাইয়া তুলিয়া, বঙ্গভাষার উপাসক, চন্দ্রনাথও তাহাদিগের অনুগামী হইয়াছেন। আমাদের দরিদ্র-সাহিত্য-ভাণ্ডার হইতে এই সকল রত্নরাজি আহরণ করিয়াও মৃত্যুর লুব্ধ করপুট নিবৃত্ত হইল না। আরও একটি উজ্জ্বল হীরক বঙ্গজননীর মুকুট হইতে অপহৃত হইয়াছে। এমনি করিয়া কালসমুদ্রের এক একটি তরঙ্গ বঙ্গসাহিত্যের এক একটি সুন্দর স্তম্ভ ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছে। সুতরাং বঙ্গবাসীর প্রকৃতই শোক করিবার কারণ আছে-সাহিত্যজীবনের নিগ্ধোজ্জল প্রভাতে নির্ম্মম কালমেঘ উঠিয়া আমাদের হৃদয় দারুণ নৈরাশ্যে ও দুঃখে অন্ধকার করিয়া ফেলিয়াছে। আজ যে মহাত্মার পুণ্য নাম লইবার জন্য আমি আপনাদের সমক্ষে দণ্ডায়মান হইয়াছি, তিনি বঙ্গসাহিত্যের কতখানি স্থান অধিকৃত করিয়াছিলেন, তাহার মোহন স্পর্শে আমাদের সাহিত্য ও জীবন কতখানি উজ্জল হইয়া উঠিয়াছিল, তাহারই কিঞ্চিৎ আলোচনা করিতে আমি চেষ্টা করিব। পরলোকগত চন্দ্রনাথ বসু যে বঙ্গভাষার একজন কৃতী লেখক ছিলেন, এবং তিনি যে বাঙ্গালী জাতির সম্মুখে একটি চিরগৌরবমণ্ডিত প্রাচীন আদর্শ ধারণ করিয়াছিলেন, তাহার জন্য তিনি আমাদের এবং আমাদের উত্তরপুৰুষের কৃতজ্ঞতার ও অসীম শ্রদ্ধার পাত্র। এখন যেমন বঙ্গীয় যুবক বঙ্গভাষাকে মেহের ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখিতে শিখিয়াছেন, চন্দ্রনাথের যৌবনকালে ঠিক এমনটি ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি যাহাদিগের নামের পশ্চাতে রহস্যময় বীজমন্ত্রের মত থাকিয়া সে সময়ে পাশ্চাত্যবিদ্যাকে আবও রহস্যময় করিয়া তুলিত, তাহারা প্রায়ই বঙ্গভাষাকে স্নেহ ও গৌরবের দৃষ্টিতে দেখিতেন না। ইংরেজীতে দখল হওয়াই তখন কলেজী শিক্ষার

  • বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের বিশেষ অধিবেশনে পঠিত।