পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৩০ ]

সে ক দিন যেন তোমার কুকথা না শুন্‌তে হয় —লোকগঞ্জনায় আমি কান পাতিতে পারিনা, তোমার ছোট ভাইটির, বড় বনটির ও বিমাতার একটু তত্ত্ব নিও —তারা সবদিন আদপেটাও খেতে পায় না—বাবা! আমি নিজের জন্যে কিছু বলি না, তোমাকে ভারও দিই না। মতিলাল এ কথা শুনিয়া দুই চক্ষু লাল করিয়া বলিল—কি তুমি একশবার ফেচ্‌ ফেচ্‌ করিয়া বক্‌তেছ?—তুমি জান না আমি এখন যা মনে করি তাই করিতে পারি?— আমার আবার কুকথা কি? এই বলিয়া মাতাকে ঠাস্‌ করিয়া এক চড় মারিয়া ঠেলিয়া ফেলিয়া দিল। অনেক ক্ষণ পরে জননী উঠিয়া অঞ্চল দিয়া চক্ষের জল পুঁছিতে২ বলিলেন —বাবা! আমি কখন শুনি নাই যে সন্তানে মাকে মারে কিন্তু আমার কপাল হইতে তাহাও ঘটিল —আমার আর কিছু কথা নাই কেবল এইমাত্র বলি যে তুমি ভাল থাক। মাতা পর দিবস আপন কন্যাকে লইয়া কাহাকেও কিছু না বলিয়া বাটী হইতে গমন করিলেন।

 রামলাল পিতার মৃত্যুর পর ভ্রাতার সঙ্গে সদ্ভাব রাখিতে অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন কিন্তু নানা প্রকারে অপমানিত হন। মতিলাল সর্ব্বদা এই ভাবিত বিষয়ের অর্দ্ধেক অংশ দিতে গেলে বড়মানুষি করা হইবে না কিন্তু বড়মানুষি না করিলে বাঁচা মিথ্যা, এজন্য যাহাতে ভাই ফাঁকিতে পড়ে তাহাই করিতে হইবে। এই মতলব স্থির করিয়া বাঞ্ছারাম ও ঠকচাচার পরামর্শে মতিলাল রামলালকে বাটী ঢুকিতে বারণ করিয়া দিল। রামলাল ভদ্রাসনে প্রবেশকরণে নিবারিত হইয়া অনেক বিবেচনা করণান্তে মাতা বা ভগিনী অথবা কাহার সহিত না সাক্ষাৎ না করিয়া দেশান্তর গমন করিলেন।