পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৫৭ ]

যাবতীয় দুষ্কর্ম করে। এই অবকাশে সেরাস্তাদার ও পেস্‌কার নীলকরের নিকট হইতে জেয়াদা ঘুস লইয়া তাহার বিপক্ষে জবানবন্দী চাপিয়া স্বপক্ষীয় কথা সকল পড়িতে আরম্ভ করিল ও ক্রমশ ছুঁচ চালাইতে২ বেটে চালাইতে লাগিল। এই অবকাশে নীলকর বক্তৃতা করিল —আমি এ স্থানে আসিয়া বাঙ্গালিদিগের নানা প্রকার উপকার করিতেছি— আমি তাহাদিগের লেখা পড়ার ও ঔষধপত্রের জন্য বিশেষ ব্যয় করিতেছি —আবার আমার উপর এই তহমত? বাঙ্গালীরা বড় বেইমান ও দাঙ্গাবাজ। ম্যাজিস্ট্রেট এই সকল কথা শুনিয়া টিফিন করিতে গেলেন। টিফিনের পর খুব চুব্‌চুবে মধুপান করিয়া চুরুট খাইতে২ আদালতে আইলেন —মকদ্দমা পেশ হইলে সাহেব কাগজ পত্রকে বাঘ দেখিয়া সেরেস্তাদারকে একেবারে বলিলেন —“এ মামলা ডিস্‌মিস্‌ কর” এই হুকুমে নীলকরের মুখটা একেবারে ফুলিয়া উঠিল, নায়েবের প্রতি তিনি কট্‌মট্‌ করিয়া দেখিতে লাগিলেন। নায়েব অধোবদনে ঢিকুতে২—ভুঁড়ি নাড়িতে২ বলিতে২ চলিলেন —বাঙ্গা‌লিদের জমীদারি রাখা ভার হইল —নীলকর বেটাদের জুলুমে মুলুক খাক হইয়া গেল —প্রজারা ভয়ে ত্রাহি২ করিতেছে। হাকিমরা স্বজাতির অনুরোধে তাহাদিগের বশ্য হইয়া পড়ে আর আইনের যেরূপ গতিক তাহাতে নীলকরদের পালাইবার পথও বিলক্ষণ আছে। লোকে বলে জমীদারের দৌরাত্ম্যে প্রজার প্রাণ গেল—এটি বড় ভুল। জমিদারেরা জুলুম করে বটে কিন্তু প্রজাকে ওতনে বজায় রেখে করে, প্রজা জমিদারের বেগুন ক্ষেত। নীলকর সে রকমে চলে না —প্রজা মরুক বা বাঁচুক তাহাতে তাহার বড় এসে যায় না —নীলের চাষ বেড়ে গেলেই সব হইল —প্রজা নীলকরের প্রকৃত মূলার ক্ষেত।