পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৬৩ ]

একেবারে শুকিয়ে গেল। পেয়াদা হাত ধরিয়া হিড়্২ করিয়া নীচে টানিয়া আনিয়া জেলে চালান করিয়া দিল। চাচা টংয়স্২ করিয়া চলিয়াছেন —মুখে বাক্য নাই —চক্ষু তুলিয়া দেখেন না, পাছে কাহারো সহিত দেখা হয় —পাছে কেহ পরিহাস করে। সন্ধ্যা হইয়াছে এমন সময় ঠকচাচা শ্রীঘরে পদার্পণ করিলেন। বড় জেলেতে যাহারা দেনার জন্য অথবা দেওয়ানি মকদ্দমা ঘটিত কয়েদ হয় তাহারা একদিকে ও যাহারা ফৌজদারি মামলা হেতু কয়েদ হয় তাহারা অন্য দিকে থাকে। ঐ সকল আসামির বিচার হইলে হয় তো তাহাদিগের ঐ স্থানে মিয়াদ খাটিতে নয় তো হরিং বাটীতে সুর্কি কুটিতে হয় অথবা জিঞ্জির বা ফাঁসি হয়। ঠকচাচাকে ফৌজদারি জেলে থাকিতে হইল, তিনি ঐ স্থানে প্রবেশ করিলে যাবতীয় কয়েদি আসিয়া ঘেরিয়া বসিল। ঠকচাচা কট্‌মট্ করিয়া সকলকে দেখিতে লাগিলেন —একজন আলাপীও দেখিতে পান না। কয়েদিরা বলিল, মুন্‌শিজি!—দেখ কি? তোমারও যে দশা আমাদেরও সেই দশা, এখন আইস মিলে যুলে থাকা যাউক। ঠকচাচা বলিলেন —হাঁ বাবা! মুই নাহক আপদে পড়েছি —মুই খাইনে, ছুঁই নে, মোর কেবল নসিবের ফের। দুই-একজন প্রাচীন কয়েদি বলিল —হাঁ তা বই কি! অনেকেই মিথ্যা দায়ে মজে যায়। একজন মুখফোড় কয়েদি বলিয়া উঠিল —তোমার দায় মিথ্যা আমাদের বুঝি সত্য? আ! বেটা কি সাওখোড় ও সরফরাজ?— ওহে ভাইসকল সাবধান —এ দেড়ে বেটা বড় বিট্কেলে লোক। ঠকচাচা অমনি নরম হইয়া আপনাকে খাট করিলেন কিন্তু তাঁহারা ঐ কথা লইয়া অনেকে ক্ষণেক কাল তর্ক বিতর্ক করিতে ব্যস্ত হইল। লোকের স্বভাবই এই, কোনো কর্ম্ম না থাকিলে একটু সূত্র ধরিয়া ফাল্‌তো কথা লইয়া গোলমাল করে।