পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৭৪ ]

বাঁধ কতক্ষণ থাকিতে পারে? ধর্ম্মের সংসার হইলে প্রস্তরের গাঁথনি হইত। এদিকে মতিলাল নিরুদ্দেশ —দলবলও অন্তর্দ্ধান —ধূমধাম কিছুই শুনা যায় না —প্রেমনারায়ণ মজুমদারের বড় আহ্লাদ —বেণীবাবুর বাড়ির দাওয়ায় বসিয়া তুড়ি দিয়া “বাবলার ফুল্‌লো কাণে লো দুলালি, মুড়িমুড়কির নাম রেখেছো রূপালী সোনালী” এই গান গাইতেছেন। ঘরের ভিতরে বেণীবাবু তানপূরা মেও২ করিয়া হামির রাগ ভাঁজিয়া “চামেলি ফুলি চম্পা” এই খেয়াল সুরৎ মূর্চ্ছনা ও গমক প্রকাশপূর্ব্বক গান করিতেছেন। ওদিকে বেচারাম বাবু “ভবে এসে প্রথমেতে পাইলাম আমি পঞ্জুড়ি” এই নরচন্দ্রী পদ ধরিয়া রাস্তায় যাবতীয় ছোঁড়াগুলাকে ঘাঁটাইয়া আসিতেছেন। ছোঁড়ারা হো২ করিয়া হাততালি দিতেছে। বেচারাম বাবু এক২ বার বিরক্তি হইয়া “দূঁর২” করিতেছেন। যৎকালে নাদেরশা দিল্লী আক্রমণ করেন তৎকালীন মহম্মদশা সংগীত শ্রবণে মগ্ন ছিলেন —নাদেরশা অস্ত্রধারী হইয়া সম্মুখে উপস্থিত হইলে মহম্মদশা কিছুমাত্র না বলিয়া সংগীতসুধা পানে ক্ষণকালের জন্যেও ক্ষান্ত হয়েন নাই—পরে একটি কথাও না কহিয়া স্বয়ং আপন সিংহাসন ছাড়িয়া দেন। বেচারাম বাবুর আগমনে বেণীবাবু তদ্রূপ করিলেন না —তিনি অমনি তানপুরা রাখিয়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া সম্মানপূর্ব্বক তাঁহাকে বসাইলেন। কিয়ৎক্ষণ শিষ্ট মিষ্ট আলাপ হইলে পর বেচারামবাবু বলিলেন —বেণী ভায়া! এতদিনের পর মুষলপর্ব্ব হইল—ঠকচাচা আপন কর্ম্ম দোষে অধঃপাতে গেলেন—তোমার মতিলালও আপন বুদ্ধিদোষে রূপস্‌ হইলেন। ভায়া!