পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৮৯ ]

লেতে আবদার করে কিনা বলে —কিনা করে? এখন তার আর রামের জন্যে আমার প্রাণ সর্ব্বদাই ধড়ফড়্ করে। কন্যা মাতার চক্ষের জল মুছাইয়া সান্ত্বনা করিতে লাগিল। কিয়ৎকাল পরে মাতার একটু তন্দ্রা হইল। কন্যা মাতাকে নিদ্রিত দেখিয়া সুস্থির হইয়া বসিয়া একটু২ বাতাস দিতে আরম্ভ করিল। দুহিতার শরীরে মশা ও ডাঁশ বসিয়া কামড়াইতে লাগিল কিন্তু পাছে মায়ের নিদ্রা ভঙ্গ হয় এজন্য তিনি স্থির হইয়া থাকিলেন। স্ত্রীলোকেদের স্নেহ ও সহিষ্ণুতা আশ্চর্য্য! বোধ হয় পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোক এ বিষয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ। মাতা নিদ্রাবস্থায় স্বপ্ন দেখিতেছেন যেন একটি পীতবসন নবকিশোর তাঁহার নিকটে আসিয়া বলিতেছেন —“মা! তুই আর কাঁদিস্‌ না —তুই বড় পুণ্যবতী —অনেক দুঃখি-কাঙ্গালির দুঃখ নিবারণ করিয়াছিস —তুই কাহার ভাল বই কখন মন্দ করিস নাই। —তোর শীঘ্র ভাল হবে —তুই দুই পুত্র পাইয়া সুখী হইবি।” দুঃখিনী মাতা চম্‌কিয়া উঠিয়া চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখেন কেবল কন্যা নিকটে আছে আর কেহই নাই। পরে কন্যাকে কিছু না বলিয়া তাহার হস্ত ধারণপূর্ব্বক বহু ক্লেশে আপনাদের কুঞ্জে প্রত্যাগমন করিলেন।

 মায়ে-ঝিয়ে সর্ব্বদা কথোপকথন হয় —মা বলেন, বাছা! মন বড় চঞ্চল হইতেছে, বাড়ি যাব সর্ব্বদা এই ভাবতেছি। কন্যা কিছুই উপায় না দেখিয়া বলিল —মা! আমাদিগের সম্বলের মধ্যে দুই একখানি কাপড় ও জল খাবার ঘটীটি আছে —ইহা বিক্রয় করিলে কি হতে পার্‌বে? কিছু দিন স্থির হও আমি রাঁধুনী অথবা দাসীর কর্ম্ম করিয়া কিছু সঞ্চয় করি তাহা হইলেই আমাদের পথ খরচের সংস্থান হইবে। মা এ কথা শুনিয়া দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া নিস্তব্ধ থাকিলেন, চক্ষের জল আর রাখিতে পারিলেন না। মাতাকে কাতর দেখিয়া কন্যাও কাতর হইল।