পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৯২ ]

আপন অবস্থা সংক্ষেপে ব্যক্ত করিলেন। তাঁহার কথা সমাপ্ত হইতে না হইতে ঐ দুইজন ভদ্রলোক পরস্পর মুখাবলোকন করিয়া তাহাদিগের মধ্যে যাহার কম বয়েস তিনি একেবারে মায়াতে মুগ্ধ হইয়া মা মা বলিয়া ভূমিতে পড়িয়া গেলেন, অন্য আর একজন অধিকবয়স্ক ব্যক্তি দুঃখিনী মাতার চরণে প্রণাম করিয়া করজোড়ে বলিলেন —মা গো! দেখ কি? যে ভূমিতে পড়িয়াছে সে তোমার অঞ্চলের ধন —সে তোমার রাম, আমার নাম বরদাপ্রসাদ বিশ্বাস। মাতা এই কথা শুনিবা মাত্রে মুখের কাপড় খুলিয়া বলিলেন —বাবা! তুমি কি বলিলে? এ অভাগিনীর কি এমন কপাল হবে? রামলাল চৈতন্য পাইয়া চরণে মস্তক দিয়া নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন, জননী পুত্রের মস্তক ক্রোড়ে রাখিয়া অশ্রুপাত করিতে২ তাহার মুখাবলোকন করিয়া আপন তাপিত মনে সান্ত্বনাবারি সেচন করিতে লাগিলেন ও ভগিনী আপন অঞ্চল দিয়া ভ্রাতার চক্ষের জল ও গায়ের ধূলা পুঁছাইয়া দিয়া নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। এদিকে ঐ বুড়ী বাটীর মধ্যে বাবুকে না পাইয়া তাড়াতাড়ি বাগানে আসিয়া দেখে যে বাবু তাহার সমভিব্যাহারিণী প্রাচীনা স্ত্রীলোকের কোলে মস্তক দিয়া ভূমে শয়ন করিয়া আছেন —ও মা এ কি গো! ওগো বাবুর কি ব্যারাম হয়েছে? আমি কি কবিরাজ ডেকে আনব? বুড়ী এই বলিয়া চিৎকার করিয়া উঠিল। বরদাপ্রসাদ বাবু বলিলেন, স্থির হও —বাবুর পীড়া হয় নাই, এই যে দুইটি স্ত্রীলোক —এঁরা বাবুর মা ও ভগিনী। বুড়ী উত্তর করিল —বাবু! দুঃখী বলে কি ঠাট্টা করতে হয়? বাবু হলেন লক্ষপতি, আর এঁরা হল পথের কাঙ্গালিনী —আমার সঙ্গে এসে কেও হলেন মা, কেও হলেন বোন— বোধ হয় এরা কামীখ্যার মেয়ে —ভেল্কিতে ভুলি-