পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৯৬ ]

আসিয়া জ্যেষ্ঠ পুত্রের মুখাবলোকনে অমূল্য ধন প্রাপ্ত হইলেন। মতিলাল মাতাকে দেখিবা মাত্রেই তাঁহার চরণে মস্তক দিয়া পড়িয়া থাকিলেন। ক্ষণেক কাল পরে মাতা হাত ধরিয়া উঠাইয়া আপন অঞ্চল দিয়া তাহার চক্ষের জল পুছাইয়া দিতে লাগিলেন ও বলিলেন —মতি! তোমার বিমাতা, ভগিনী ও স্ত্রী আছেন তাহাদিগের সহিত সাক্ষাৎ কর। মতিলাল ভগিনী ও বিমাতাকে প্রণাম করিয়া আপন পত্নীকে দেখিয়া পূর্ব্বকথা স্মরণ হওয়াতে রোদন করিয়া বলিলেন —মা! আমি যেমন কুপুত্র, কুভ্রাতা, তেমনি কুস্বামী —এমন সৎস্ত্রীর যোগ্য আমি কোনো প্রকারেই নহি! স্ত্রী-পুরুষ বিবাহকালীন পরমেশ্বরের নিকট এক প্রকার শপথ করে যে তাহার যাবজ্জীবন পরস্পর প্রেম করিবে, মহাক্লেশে পড়িলেও ছাড়াছাড়ি হইবে না —স্ত্রী অন্য পুরুষের প্রতি মন কখন হইবে না এবং পুরুষেরও অন্য স্ত্রীর প্রতি মন কদাপি যাইবে না —ঐরূপ মননে ঘোর পাপ। এই শপথের বিপরীত কর্ম্ম আমা হইতে অনেক হইয়াছে তবে স্ত্রী কর্ত্তৃক আমি পরিত্যক্ত কেন না হই? আর আমার এমন যে ভাই ও ভগিনী তাহাদিগের প্রতি যৎপরোনাস্তি নিগ্রহ করিয়াছি —তুমি যে মা —যার বাড়া পৃথিবীতে অমূল্য বস্তু আর নাই —তোমাকে অসীম ক্লেশ দিয়াছি —পুত্র হইয়া তোমাকে প্রহার করিয়াছি। মা! এ সকল পাপের কি প্রায়শ্চিত্ত আছে? এক্ষণে আমার শীঘ্র মৃত্যু হইলে মনে যে দাবানাল জ্বলিতেছে তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাই, কিন্তু বোধ করি মৃত্যুর মৃত্যু হইয়াছে কারণ তাহার দূতস্বরূপ রোগের কিছু চিহ্ণ দেখি না —যাহা হউক তোমরা সকলে বাটী যাও —আমি এই ধামে গুরুর নিকট থাকিয়া কঠোর অভ্যাসে প্রাণ ত্যাগ করিব।

 অনন্তর বরদা বাবু, রামলাল ও তাহার মাতা মতিলালের গুরুকে আনাইয়া বিস্তর বুঝাইয়া মতিলালকে