পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৮ ]

মুখস্থ করিলে স্মরণশক্তির বৃদ্ধি হয় বটে, কিন্তু তাহাতে যদ্যপি বুদ্ধির জোর ও কাজের বিদ্যা না হইল, তবে সে লেখাপড়া শেখা কেবল লোক দেখাবার জন্য। শিষ্য বড় হউক বা ছোট হউক, তাহাকে এমন করিয়া বুঝাইয়া দিতে হইবেক, যে পড়াশুনাতে তাহার মন লাগে—সেরূপ বুঝান শিক্ষার সুধারা ও কৌশলের দ্বারা হইতে পারে—কেবল তাঁইস করিলে হয় না।

 বৈদ্যবাটীর বাটীতে থাকিয়া মতিলাল কিছুমাত্র সুনীতি শেখে নাই। এক্ষণে বহুবাজারে থাকিতে হিতে বিপরীত হইল। বেচারাম বাবুর দুই জন ভাগিনেয় ছিল, তাহাদের নাম হলধর ও গদাধর, তাহারা জন্মাবধি পিতা কেমন দেখে নাই। মাতার ও মাতুলের ভয়ে এক একবার পাঠশালায় গিয়া বসিত, কিন্তু সে নামমাত্র, কেবল পথে ঘাটে—ছাতে মাঠে—ছুটাছুটি—হুটোহুটি করিয়া বেড়াইত। কেহ দমন করিলে দমন শুনিত না—মাকে বলিত, তুমি এমন করোত আমরা বেরিয়ে যাব। একে চায় আরে পায়—তাহারা দেখিল মতিলালও তাহাদেরই একজন। দুই এক দিনের মধ্যেই হলাহলি গলাগলি ভাব হইল। এক জায়গায় বসে—এক জায়গায় খায়—এক জায়গায় শোয়। পরস্পর এ ওর কাঁধে হাত দেয় ও ঘরে দ্বারে বাহিরে ভিতরে হাত ধরাধরি ও গলা জড়াজড়ি করিয়া বেড়ায়। বেচারাম বাবুর ব্রাহ্মণী তাহাদিগকে দেখিয়া এক এক বার বলিতেন আহা এরা যেন এক মার পেটের তিনটি ভাই।

 কি শিশু কি যুবা কি বৃদ্ধ ক্রমাগত চুপ করিয়া, অথবা এক প্রকার কর্ম্ম লইয়া থাকিতে পারে না। সমস্ত দিন রাত্রির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন কর্ম্মে সময় কাটাইবার উপায় চাই। শিশুদিগের প্রতি এমন নিয়ম করিতে হইবেক যে তাহারা খেলাও করিবে—পড়াশুনাও করিবে। ক্রমাগত খেলা করা