পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ২১ ]

 মতিলাল যেমন বাপের বেটা—যেমন সহবত পাইয়াছিল—যেমন স্থানে বাস করিত—যেমন স্কুলে পড়িতে লাগিল তেমনি তাহার বিদ্যাও ভারি হইল। এক প্রকার শিক্ষক প্রায় কোন স্কুলে থাকে না, কেহবা প্রাণান্তিক পরিশ্রম করিয়া মরে—কেহবা গোঁপে তা দিয়া উপর চাল চলিয়া বেড়ায়। বটতলার বক্রেশ্বর বাবু কালুস সাহেবের সোণার কাটি রুপার কাটি ছিলেন। তিনি যাবতীয় বড় মানুষের বাটীতে যাইতেন ও সকলেকেই বলিতেন—আপনার ছেলের আমি সর্ব্বদা তদারক করিয়া থাকি—মহাশয়ের ছেলে না হবে কেন! সেতো ছেলে নয় পরশ পাথর! স্কুলের উপর উপর ক্লাসের ছেলেদিগকে পড়াইবার ভার ছিল, কিন্তু যাহা পড়াইতেন, তাহা নিজে বুঝিতে পারিতেন কি না সন্দেহ। এ কথা প্রকাশ হইল ঘোর অপমান হইবে, এজন্য চেপে চুপে রাখিতেন। বালকদিগকে কেবল মথন পড়াইতেন—মানে জিজ্ঞাসা করিলে বলিতেন, ডিক্সনেরী দেখ্। ছেলেরা যাহা তরজমা করিত, তাহার কিছু না কিছু কাটাকুটি করিতে হয়, সব বজায় রাখিলে মাষ্টারগিরি চলে না, কার্য্য শদ্ব কাটিয়া কর্ম্ম লিখিতেন, অথবা কর্ম্ম শব্দ কাটিয়া কার্য্য লিখিতেন—ছেলেরা জিজ্ঞাসা করিলে বলিতেন, তোমরা বড়ো বেআদব, আমি যাহা বলিব তাহার উপর আবার কথা কও? মধ্যে মধ্যে বড়মানুষের ছেলেদের লইয়া বড় আদর করিতেন ও জিজ্ঞাসা করিতেন—তোমাদের অমুক জায়গার ভাড়া কত—অমুক তালুকের মুনাফা কত? মতিলাল অল্প দিনের মধ্যে বক্রেশ্বর বাবুর অতি প্রিয়পাত্র হইল। আজ ফুলটি, কাল ফল্‌টি, আজ বইখানি, কাল হাত-রুমালখানি আনিত, বক্রেশ্বরবাবু মনে করিতেন মতিলালের মত ছেলেদিগকে হাতছাড়া করা ভাল নয়—ইহারা বড় হইয়া