পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ২৮ ]

 কর্ত্তা। হাঁ—ভাল আছে—শুনিলাম পুলিশের লোক আজ্ তাহাকে ধরে হিঁচুড়ে লইয়া গিয়া কয়েদ করিয়াছে।

 গৃহিণী। কি বল্লে?—মতিকে হিঁচুড়িয়া লইয়া গিয়া কয়েদ করিয়াছে? ওগো, কেন কয়েদ করেছে? আহা বাছার গায়ে কতই ছড় গিয়াছে, বুঝি আমার বাছা খেতেও পায় নাই—শুতেও পায়নাই! ওগো কি হবে? আমার মতিকে এখুনি আনিয়া দাও।

 এই বলিয়া গৃহিণী কাঁদিতে লাগিলেন—দুই কন্যা চক্ষের জল মুচাইতে২ নানা প্রকার সান্ত্বনা করিতে আরম্ভ করিল। গৃহিণীর রোদন দেখিয়া কোলের শিশুটিও কাঁদিতে লাগিল।

 ক্রমে২ কথা বার্ত্তার ছলে কর্ত্তা অনুসন্ধান করিয়া জানিলেন মতিলাল মধ্যে২ বাড়িতে আসিয়া মায়ের নিকট হইতে নানা প্রকার ছল করিয়া টাকা লইয়া যাইত। গৃহিণী একথা প্রকাশ করেন নাই—কি জানি কর্ত্তা রাগ করিতে পারেন—অথচ ছেলেটিও আদুরে—গোসা করিলে পাছে প্রমাদ ঘটে। ছেলে পুলের সংক্রান্ত সকল কথা স্ত্রীলোকদিগের স্বামীর নিকট বলা ভাল। রোগ লুকাইয়া রাখিলে কখনই ভাল হয় না। কর্ত্তা গৃহিণীর সহিত অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত পরামর্শ করিয়া পরদিন কলিকাতায় যে স্থানে যাইবেন তথায় আপনার কয়েকজন আত্মীয়কে উপস্থিত হইবার জন্য রাত্রিতেই চিঠি পাঠাইয়া দিলেন।

 সুখের রাত্রি দেখিতে২ যায়। যখন মন চিন্তার সাগরে ডুবে থাকে তখন রাত্রি অতিশয় বড় বোধ হয়। মনে হয় রাত্রি পোহাইল কিন্তু পোহাইতে পোহাইতেও পোহায় না। বাবুরাম বাবুর মনে নানা কথা—নানা ভাব—নানা কৌশল—নানা উপায় উদয় হইতে লাগিল। ঘরে আর স্থির হইয়া থাকিতে পারিলেন না, প্রভাত না হইতে২ ঠকচাচা প্রভৃতিকে